ব্যাংক লুট ও থানায় আক্রমণের পর পুরো বান্দরবানের থানচি জুড়ে দেখা দিয়েছে সীমাহীন আতঙ্ক। মসজিদে পুলিশ প্রহরায় আদায় করা হয়েছে জুমার নামাজ। এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন মানুষজন।
ফের হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় থানা ও আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। পুলিশের কণ্ঠে প্রতিরোধে সুর। বলছে, এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।
সরেজমিনে থানচি এলাকায় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, আজ শুক্রবার থানচি পাড়া জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়েছে পুলিশ পাহারায়। থানা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের এই মসজিদে নামাজ শুরুর আগেই অস্ত্র হাতে অবস্থান নেয় পুলিশ।
সকাল থেকে ট্রাকে করে নারী-পুরুষদের এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে। এ সময় তাদের সঙ্গে খাবার ও অতিরিক্ত কাপড় দেখা গেছে।
থানচি সদর উপজেলার বাজারের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বন্ধ। যারা খুলেছেন, তারাও আছেন আতঙ্কে।
স্থানীয়রা জানান, থানচি থানার পাশে তিনটি পাড়ায় প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস। বৃহস্পতিবার কেএনএফ যখন গোলাগুলি শুরু করে তখন আতঙ্কে দিকবেদিক ছুটতে থাকে থানচি থানার আশেপাশে পুরো এলাকার মানুষ। অনেকেই আশ্রয় নেয় জঙ্গলে। গোলাগুলি থামলেও আতঙ্কে রাত কেটেছে সবার।
স্থানীয় থানচি পাড়ার কয়েকজন মহিলা জানান, প্রতিরাতে গোলাগুলি হচ্ছে। ভয়ে রাতে অস্থির থাকছেন। রাতে ঘুমাতে পারছেন না।
কবির আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, গত পঞ্চাশ বছরে এমন অরাজকতা দেখিনি।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি সঞ্জয় সরকার ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে বলেন, থানায় আবারও হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রায় ২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে থানচি থানায়। বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্র তাক করে সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা। থানার বাইরে যাতে আলো যায় সে জন্য নতুন লাইট লাগানো হয়েছে। বালির বস্তা দিয়ে অ্যাম্বুশ তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে র্যাব মুখপাত্র খন্দককার আল মঈন সকালে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, লুট হওয়া অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফের সদস্যদের আটক করতে সর্বাত্মক কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার রাতে তারাবি নামাজের সময় বান্দরবানের রুমা শাখা সোনালী ব্যাংক ও আশেপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে শতাধিক সশস্ত্র দুর্বৃত্ত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মসজিদ থেকে ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে ধরে নিয়ে ব্যাংকের ভেতরে মারধর করে তারা। পরে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এ সময় ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১০ পুলিশ ও ৪ আনসার সদস্যকে নিরস্ত্র করে ৮টি চাইনিজ অটোমেটিক রাইফেল, ২টি এসএমজি, ৪টি শটগান ও ৪১৫ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় ২ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার ১৬ ঘণ্টা পর থানচিতে আরও দুটি ব্যাংকে ডাকাতি হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে অপহৃত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনকে রুমা বাজার থেকে উদ্ধার করে র্যাব। এর পরপরই থানচি থানা থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনেন স্থানীয়রা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই গোলাগুলি চলে।
স্থানীয়রা বলছেন, থানচি থানার পাশে প্রথম গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। পরে তা থানচি বাজারের কাছে চলে আসে। এ সময় সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের গুলিবিনিময় হয়। পুলিশ জানিয়েছে, থানায় হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে তারা প্রায় ৫০০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই মধ্যরাতে আলীকদমের ২৬ মাইল ডিম পাহাড় এলাকায় যৌথবাহিনীর চেক পোস্টে হামলা হয়। সবগুলো ঘটনার সঙ্গেই কেএনএফ জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।