নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার একটি পুকুরে অন্য মাছের সঙ্গে মিলেছে প্রায় ১০ রুপালি ইলিশ। প্রতিটি ইলিশের ওজন প্রায় ৫০০-৬০০ গ্রাম। আজ বুধবার সকালে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ‘যুগান্তর কিল্লা’ গুচ্ছগ্রামের পুকুরে জাল ফেললে মাছগুলো ধরা পড়ে।
জানা যায়, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ‘যুগান্তর কিল্লা’ গুচ্ছগ্রামের পুকুরটি ৪০টি পরিবার ব্যবহার করে। পুকুরটি লিজ নিয়েছেন নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সি প্যালেস রিসোর্টের মালিক আবদুল মান্নান। বিশাল পুকুরে প্রায় সাত দিন ধরে সেচ দিয়ে পানি কমান তিনি। বুধবার সকালে পানি কমে এলে জেলেদের জাল দিয়ে মাছগুলো ওপরে তুলেন। এ সময় অন্য মাছের সঙ্গে প্রায় ১০ কেজি রুপালি ইলিশ ধরা পড়ে। বিগত বছরগুলোতেও এই পুকুরে ইলিশ মাছ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘২০২২ সালে প্রথম ধাপে ৩৫টি ইলিশ মাছ পাওয়া গেছে। পরে আবারও পাওয়া গেছে। এই বছর প্রথম ধাপে ১০ কেজি ইলিশ পাওয়া গেল। এটা সত্যিই আনন্দের। মাছগুলো দেখতে ভোরবেলায় মানুষের ভিড় জমে। আরও মাছ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
পুকুরের মালিক আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রায় ৪০ পরিবার যুগান্তর কিল্লা গুচ্ছগ্রামের পুকুরটি ব্যবহার করে। আজ পুরো পুকুরে জেলেদের দিয়ে জাল ফেলানো হয়েছে। জালে অন্য মাছের সঙ্গে ১০ কেজি ইলিশ ধরা পড়েছে। মাছগুলো ৫০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রামের মধ্যে। জোয়ার এলে পুকুরটিতে পানি ঢুকে যায়। আমি পানি ধরে রাখি তাই ইলিশ মাছগুলো জীবিত থাকে। এ বছর ১০০ থেকে ১২০ কেজি ইলিশ পাব বলে ধারণা করছি।’
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় এলে নিঝুমদ্বীপের প্রায় সবগুলো পুকুর তলিয়ে যায়। এই পুকুরগুলোর একটি যুগান্তর কিল্লা পুকর। সেখানে আবদুল মান্নান ২০২২ সালেও ৬-৭ কেজি ইলিশ মাছ পেয়েছিলেন। এবার পেয়েছেন ১০ কেজি। মূলত জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় তখন ইলিশ পুকুরে এসেছে। পানি বের হতে না পারায় মাছগুলো নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পুকুরে ইলিশ হয় বিষয়টি এমন নয়। মূলত জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ইলিশ পুকুরে এসেছে। নিঝুমদ্বীপ নিচু এলাকা, তাই জোয়ারে প্লাবিত হয়। পুকুরটি যখন প্লাবিত হয়েছে, তখন ইলিশ প্রবেশ করেছে। এছাড়া আলাদা কিছু এখানে নেই।’
এ বিষয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। ইলিশ মাছ একটি বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের মাছ। জোয়ারের পানি পুকুরে প্রবেশ করলে তখন নোনা পানির সঙ্গে ইলিশও প্রবেশ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাদু পানিতে ইলিশ মাছ কম বাড়লেও একটা সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে বাণিজ্যিকভাবে এটি লাভজনক নয়। এ ছাড়া স্বাদু পানিতে ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ ঠিক থাকে না।’