পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন অন্তত হাজারো মুসল্লি ইফতার করেন। আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইফতার করানো হলেও, গত কয়েক বছর ধরে মুসল্লিদের উদ্যোগে তিন ভাগে রোজাদারদের ইফতার করানো হচ্ছে। এতে আশপাশের দোকানদার, কর্মচারী, পথচারীসহ দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে বায়তুল মোকাররম এলাকায় আসা রোজাদাররা উপকৃত হচ্ছেন।
বায়তুল মোকাররমে তিনটি স্থানে বিনা মূল্যে সাধারণ মুসল্লিদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। বায়তুল মোকাররম মুসল্লি কমিটি, বাংলাদেশ মুসল্লি সমাজ ও তাবলিগের উদ্যোগে পৃথকভাবে এই আয়োজন করা হয়। প্রতিদিনই এখানে হাজারো লোকের সমাগম ঘটে। চাহিদা বাড়ায় প্রতিবছরই অল্প অল্প করে আয়োজনের পরিমাণও বাড়ছে।
প্রতিদিন ইফতারের আয়োজনে থাকছে খেজুর, ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, আলুর চপ, জিলাপি, কলা ও মিনারেল পানি থাকে। অনেক মুসল্লি এসব দিয়ে কখনও ইফতার করতে পারেন না। এমন উদ্যোগের ফলে তারাও শামিল হয়ে খেতে পারছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বায়তুল মোকাররমে আসরের নামাজ আদায় করেই ইফতার করতে বসে যান সাধারণ মুসল্লিরা। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজারের মতো রোজাদার এখানে ইফতার করেন। মুসল্লি কমিটির উদ্যোগে পূর্ব সাহানের উত্তর প্রান্তে তিন হাজার জন, বাংলাদেশ মুসল্লি সমাজের উদ্যোগে দক্ষিণ সাহানে এবং তাবলিগের উদ্যোগে পূর্ব সাহানের দক্ষিণ প্রান্তে আরও এক হাজার জনের ইফতারের আয়োজন হয়।
রোজাদার মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই বায়তুল মোকাররমের আশপাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কর্মব্যস্ত পথচারী কিংবা বিভিন্ন কাজে ঢাকায় আসা ব্যক্তি। আসরের নামাজ আদায় করার পর ইফতার করতে বসেছেন তারা। বায়তুল মোকাররমে বিনা মূল্যে ইফতার করতে পেরে বেশ খুশি ও সন্তুষ্ট তারা।
নরসিংদী থেকে এসেছেন আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, বায়তুল মোকাররমের দোকানের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছিলাম। এই মসজিদে আসরের নামাজ পড়ার পর জানলাম এখানে ইফতারের ব্যবস্থা আছে। এ জন্য ইফতার করতে বসলাম। এখানে ব্যবস্থা না থাকলে হয়তো বাইরে কোথাও ইফতার করা হতো। একটু সমস্যায় পড়তে হতো। এখানে ইফতার করে নামাজ শেষে নিশ্চিন্তে বাড়ির দিকে রওনা দেবো।
বায়তুল মোকাররমে ইফতার করা মুসল্লি মোহাম্মদ জিহাদুল ইসলাম বলেন, আমি লালমনিরহাট থেকে এখানে ইসলামি বইমেলায় এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই সংগ্রহ করার জন্য। দুপুর থেকে হেঁটে বেশ কয়েকটা বই কিনলাম। আসরের নামাজ পড়ার পর ভাবলাম চলে যাবো। কিন্তু নামাজ শেষে দেখলাম সবাই ইফতার করতে বসে গেল। এ জন্য আমি এখানে ইফতার করলাম।
মোতালেব নামের আরেকজন মুসল্লি বলেন, আমি এখানে আট বছর ধরে ব্যবসা করি। নিয়মিতই এখানে ইফতার করি। আমার মতো আশপাশের অনেক ছোট ব্যবসায়ী এখানে ইফতার করেন। এতে কিছুটা আর্থিক সাশ্রয় হয়। তা ছাড়া আসরের নামাজের পর আর কোনও দিকে যেতে ইচ্ছে করে না। ক্লান্তি চলে আসে। এ জন্য নামাজ শেষে এখানে সব সময় ইফতার করতে বসে যাই।
বায়তুল মোকাররমে বিনা মূল্যে ইফতার করানোর বিষয়ে মুসল্লি কমিটির সভাপতি হাজী ইয়াকুব আলী বলেন, মুসল্লি কমিটির উদ্যোগে ২০২২ সালে প্রথমবার ৭০০ জনের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। গত বছর প্রথমে দুই হাজার জনের জন্য ইফাতারের আয়োজন করা হয়েছিল। শেষ দিকে আরও বাড়িয়ে প্রায় আড়াই হাজার করা হয়। এবার চাহিদা আরও বেড়ে যাওয়ায় তিন হাজার লোকের জন্য আয়োজন করা হয়েছে। যদি চাহিদা আরও বাড়ে, তাহলে সরবরাহ বাড়িয়ে দেবো।
শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে শেষ মুহূর্তে আসা শতাধিক মানুষ ইফতার করতে পারেনি। পরে মাইক দিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে যে ইফতার শেষ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে হাজী ইয়াকুব আলী বলেন, আমাদের যে পরিমাণ ইফতার ছিল, আজ তা শেষ হয়ে গিয়েছে। আজ অনেক মুসল্লি এসেছে। মুসল্লি কমিটির ইফতারের অর্থায়ন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমরা তাকে বিষয়টা জানাবো যেন সরবরাহ বাড়িয়ে দেন।
মুসল্লি সমাজের উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা পীর সাহেব শায়খ ফজলুল হক। তিনিও প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ মুসল্লির ইফতারির ব্যবস্থা করেন। প্রায় ২৭ বছর ধরে এ ইফতারের আয়োজন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে এ আয়োজন করা হয়। মানুষ যাতে সারা দেশে এ ধরনের আয়োজন করে, সে জন্য উৎসাহিত করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া তাবলিগের উদ্যোগেও প্রায় ৫০০ জনের ইফতারির আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরই মুসল্লিদের জন্য এ আয়োজন করা হয়। এই ইফতারির মধ্যে খেজুর, ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, আলুর চপ, জিলাপি, কলা ও মিনারেল পানি থাকে।