ঢাকা ০১:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তেজনা ছড়িয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৬:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

উত্তেজনা ছড়িয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ

শেষ ওভারে প্রয়োজন ১১ রান। প্রথম ডেলিভারিটি ওয়াইড দিয়ে লক্ষ্য দশে নামালেন কেশব মহারাজ। পরের বলে বাই থেকে এক রান নিয়ে জাকের আলীকে স্ট্রাইক দিলেন মাহমুদউল্লাহ। তৃতীয় বলটি উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়লেন জাকের। চতুর্থ বলে রিশাদকে লেগ বিফোরের জন্য রিভিউ নিলেন মহারাজ, তবে ব্যর্থ হলেন। এরই মধ্যে এক রান নিয়ে জায়গা বদল করলেন তারা।

দুই বলে তখন প্রয়োজন ৬ রান। স্ট্রাইকে মাহমুদউল্লাহ, বাংলাদেশকে একা হাতে অসংখ্য ম্যাচ জেতানো মাহমুদউল্লাহ। মহারাজ ফুল টস দিলেন, কষে মারলেনও মাহমুদউল্লাহ, তবে সীমান্তে ধরা পড়লেন তিনি। মাথায় হাত উঠে গেল তার, মাথায় হাত দিলেন গ্যালারিভর্তি টাইগার-সমর্থকও। পরের বলটিও ফুল টস হলো, তবে ব্যাট-বলে সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হলেন রিশাদ। হেরে গেল বাংলাদেশ।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের খুব কাছে গিয়েও মাত্র চার রানে হেরে হৃদয় ভাঙল টাইগারদের। এর ফলে টানা তিন জয়ে গ্রুপের শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপের প্রথম দল হিসেবে শেষ আট নিশ্চিত করল প্রোটিয়ারা। আর ঝুলে রইল বাংলাদেশের ভাগ্য।

১১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সাত উইকেটে ১০৯ রান করেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে তৌহিদ হৃদয় সর্বোচ্চ ৩৭ ও মাহমুদউল্লাহ ২০ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কেশব মহারাজ নেন সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট। এছাড়া নর্টকিয়া ও রাবাদা উইকেট নিয়েছেন দুটি করে।

৪৬ রান করে দলের সংগ্রহের ভিত গড়ে দেওয়ায় হাইনরিখ ক্লাসেনকে দেওয়া হয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।

দ্বিতীয় ইনিংসে মার্কো ইয়ানসেনের প্রথম ওভারে এক রান নেওয়ার পর জোড়া চারে দ্বিতীয় ওভার শুরু করেন তানজিদ তামিম। তবে রাবাদার ওই ওভারের শেষ বলে ওয়াইড লেংথের বলে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফলে ৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর লিটনকে নিয়ে দেখেশুনে খেলে পাওয়ার প্লেতে আর উইকেট না হারিয়েই দলীয় সংগ্রহ ২৯ রানে নিয়ে যান অধিনায়ক শান্ত। তবে পরের ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন লিটন। কেশব মহারাজের আউটসাইড অফের ডেলিভারিতে সজোরে ব্যাট চালিয়ে শর্ট কভার অঞ্চলে মিলারের তালুবন্দি হন তিনি।

লিটন ১৩ বলে ৯ রান করে ফিরলে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেওয়া সাকিবও পরের ওভারে ক্যাচ হয়ে ফেরেন। আনরিখ নর্টকিয়ার প্রথম ওভারেই তার শিকার হন তিনি।

দশম ওভারে ফিরে যান শান্ত। প্রোটিয়া পেসারদের মোকাবিলা করতে শুরু থেকেই যথেষ্ট ভুগছিলেন তিনি। শেষমেষ দশম ওভারের পঞ্চম বলে নর্টকিয়ার দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ১৪৬ কিলোমিটার গতির বলটিকে বাউন্সার দেন নর্টকিয়া। সেটি শরীরের মধ্যে উঠে গেলে পুল করতে চান শান্ত। তবে এজ হয়ে বলটি ওপরে উঠে গেলে শর্ট মিড উইকেট থেকে সহজ ক্যাচটি লুফে নেন মার্করাম।

এর ফলে দশ ওভার শেষ ৫০ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন তৌহিদ হৃদয় ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

হৃদয়-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে একসময় জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। তবে ১৬.২ ওভারে জয়ের জন্য যখন আর ২৬ রান প্রয়োজন, তখন টাইগার ভক্তদের হৃদয়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওটনিয়েল বার্টম্যানের বল মাহমুদুল্লাহর প্যাডে আঘাত করলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিলে দেখা যায়, লেগ স্ট্যাম্প মিস করেছে বল। ফলে বেঁচে যান মাহমুদুল্লাহ; এর সঙ্গে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সমর্থকরাও।

কিন্তু পরের ওভারে রাবাদার প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হয় হৃদয়কে। তিনিও রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে বাঁচতে পারেননি। ৩৪ বল খেলে দুটি করে ছক্কা ও চারের সাহায্যে ৩৭ রান করে হৃদয় যখন ফিরছেন, তখন দলের প্রয়োজন ১৭ বলে ২০ রান।

এরপর শেষ ওভারের নাটকীয়তায় চার রানে জিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

উল্লেখ্য, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এখনও জয় পায়নি বাংলাদেশ। এই ম্যাচের আগে আটবারের দেখায় প্রতিবারই টাইগারদের হতাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত চারবার দেখা হয়েছে দুই দলের। ২০০৭ সালের প্রথম আসরে ৭ স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে উইকেটে হারে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আসরে ৬ উইকেটে, ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত আসরে ১০৪ রানে এবং ২০২৪ সালের ১০ জুনের এই ম্যাচে মাত্র চার রানে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদবঞ্চিত হলো নাজমুল হোসেন শান্তর বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের এই চার ম্যাচের বাইরে দুই দলের আরও পাঁচবার দেখা হয়েছে। ২০০৮ সালে জোহানেসবার্গে ১২ রানে, ২০১৫ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ১৫ রানে ও ৩১ রানে, ২০১৭ সালে ব্লোয়েমফন্টেইনে ২০ রানে ও পচেফস্ট্রুমে ৮৩ রানে হারে বাংলাদেশ।

এই ম্যাচ হেরে শেষ আটে উঠতে তাই আগামী ১৩ ও ১৬ জুন যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

২ দিনে সারাদেশে ২৫টি স্থানে সহিংসতায় আগুনের ঘটনা

উত্তেজনা ছড়িয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৫:৩৬:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

শেষ ওভারে প্রয়োজন ১১ রান। প্রথম ডেলিভারিটি ওয়াইড দিয়ে লক্ষ্য দশে নামালেন কেশব মহারাজ। পরের বলে বাই থেকে এক রান নিয়ে জাকের আলীকে স্ট্রাইক দিলেন মাহমুদউল্লাহ। তৃতীয় বলটি উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়লেন জাকের। চতুর্থ বলে রিশাদকে লেগ বিফোরের জন্য রিভিউ নিলেন মহারাজ, তবে ব্যর্থ হলেন। এরই মধ্যে এক রান নিয়ে জায়গা বদল করলেন তারা।

দুই বলে তখন প্রয়োজন ৬ রান। স্ট্রাইকে মাহমুদউল্লাহ, বাংলাদেশকে একা হাতে অসংখ্য ম্যাচ জেতানো মাহমুদউল্লাহ। মহারাজ ফুল টস দিলেন, কষে মারলেনও মাহমুদউল্লাহ, তবে সীমান্তে ধরা পড়লেন তিনি। মাথায় হাত উঠে গেল তার, মাথায় হাত দিলেন গ্যালারিভর্তি টাইগার-সমর্থকও। পরের বলটিও ফুল টস হলো, তবে ব্যাট-বলে সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হলেন রিশাদ। হেরে গেল বাংলাদেশ।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের খুব কাছে গিয়েও মাত্র চার রানে হেরে হৃদয় ভাঙল টাইগারদের। এর ফলে টানা তিন জয়ে গ্রুপের শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপের প্রথম দল হিসেবে শেষ আট নিশ্চিত করল প্রোটিয়ারা। আর ঝুলে রইল বাংলাদেশের ভাগ্য।

১১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সাত উইকেটে ১০৯ রান করেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে তৌহিদ হৃদয় সর্বোচ্চ ৩৭ ও মাহমুদউল্লাহ ২০ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কেশব মহারাজ নেন সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট। এছাড়া নর্টকিয়া ও রাবাদা উইকেট নিয়েছেন দুটি করে।

৪৬ রান করে দলের সংগ্রহের ভিত গড়ে দেওয়ায় হাইনরিখ ক্লাসেনকে দেওয়া হয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।

দ্বিতীয় ইনিংসে মার্কো ইয়ানসেনের প্রথম ওভারে এক রান নেওয়ার পর জোড়া চারে দ্বিতীয় ওভার শুরু করেন তানজিদ তামিম। তবে রাবাদার ওই ওভারের শেষ বলে ওয়াইড লেংথের বলে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফলে ৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর লিটনকে নিয়ে দেখেশুনে খেলে পাওয়ার প্লেতে আর উইকেট না হারিয়েই দলীয় সংগ্রহ ২৯ রানে নিয়ে যান অধিনায়ক শান্ত। তবে পরের ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন লিটন। কেশব মহারাজের আউটসাইড অফের ডেলিভারিতে সজোরে ব্যাট চালিয়ে শর্ট কভার অঞ্চলে মিলারের তালুবন্দি হন তিনি।

লিটন ১৩ বলে ৯ রান করে ফিরলে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেওয়া সাকিবও পরের ওভারে ক্যাচ হয়ে ফেরেন। আনরিখ নর্টকিয়ার প্রথম ওভারেই তার শিকার হন তিনি।

দশম ওভারে ফিরে যান শান্ত। প্রোটিয়া পেসারদের মোকাবিলা করতে শুরু থেকেই যথেষ্ট ভুগছিলেন তিনি। শেষমেষ দশম ওভারের পঞ্চম বলে নর্টকিয়ার দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ১৪৬ কিলোমিটার গতির বলটিকে বাউন্সার দেন নর্টকিয়া। সেটি শরীরের মধ্যে উঠে গেলে পুল করতে চান শান্ত। তবে এজ হয়ে বলটি ওপরে উঠে গেলে শর্ট মিড উইকেট থেকে সহজ ক্যাচটি লুফে নেন মার্করাম।

এর ফলে দশ ওভার শেষ ৫০ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন তৌহিদ হৃদয় ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

হৃদয়-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে একসময় জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। তবে ১৬.২ ওভারে জয়ের জন্য যখন আর ২৬ রান প্রয়োজন, তখন টাইগার ভক্তদের হৃদয়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওটনিয়েল বার্টম্যানের বল মাহমুদুল্লাহর প্যাডে আঘাত করলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিলে দেখা যায়, লেগ স্ট্যাম্প মিস করেছে বল। ফলে বেঁচে যান মাহমুদুল্লাহ; এর সঙ্গে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সমর্থকরাও।

কিন্তু পরের ওভারে রাবাদার প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হয় হৃদয়কে। তিনিও রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে বাঁচতে পারেননি। ৩৪ বল খেলে দুটি করে ছক্কা ও চারের সাহায্যে ৩৭ রান করে হৃদয় যখন ফিরছেন, তখন দলের প্রয়োজন ১৭ বলে ২০ রান।

এরপর শেষ ওভারের নাটকীয়তায় চার রানে জিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

উল্লেখ্য, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এখনও জয় পায়নি বাংলাদেশ। এই ম্যাচের আগে আটবারের দেখায় প্রতিবারই টাইগারদের হতাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত চারবার দেখা হয়েছে দুই দলের। ২০০৭ সালের প্রথম আসরে ৭ স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে উইকেটে হারে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আসরে ৬ উইকেটে, ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত আসরে ১০৪ রানে এবং ২০২৪ সালের ১০ জুনের এই ম্যাচে মাত্র চার রানে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদবঞ্চিত হলো নাজমুল হোসেন শান্তর বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের এই চার ম্যাচের বাইরে দুই দলের আরও পাঁচবার দেখা হয়েছে। ২০০৮ সালে জোহানেসবার্গে ১২ রানে, ২০১৫ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ১৫ রানে ও ৩১ রানে, ২০১৭ সালে ব্লোয়েমফন্টেইনে ২০ রানে ও পচেফস্ট্রুমে ৮৩ রানে হারে বাংলাদেশ।

এই ম্যাচ হেরে শেষ আটে উঠতে তাই আগামী ১৩ ও ১৬ জুন যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে।