টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দোরগোড়ায়। শিরোপার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে লড়াই চলবে ২০টি দেশের। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারলেও নিজেদের যোগ্যতার ছাপ রাখতে বদ্ধপরিকর টাইগাররা। বাংলাদেশ দলে এমন কয়েকজন তারকা খেলোয়াড় আছেন যারা যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে নিজেদের পক্ষে নিতে পারেন।
এদিকে মূল আসরের ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও দলের জন্য বিশ্বকাপের আগে এই হার এক প্রকার সতর্কবার্তাই বলা যায়।
যদিও তরুণ প্রতিভা এবং অভিজ্ঞ সঙ্গীদের নিয়ে গড়া শান্তর এই দল, যে খেলোয়াড়রা এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে।
ব্যাটিংয়ে চোখ রাখলে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারেন তানজিদ হাসান তামিম, যিনি ইনিংসের শক্ত ও গতিময় শুরু দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন।
৭টি টি-টোয়েন্টিতে ১২০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৩টি হাফ সেঞ্চুরি তার। এই অল্প সময় হয়তো তার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট নয়, কিন্তু বিশ্বমঞ্চে মূল্যবান সম্পদ হয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন তানজিদ। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
টপ অর্ডারে তানজিদের পর লিটন দাসও হয়ে উঠতে পারেন বিধ্বংসী শক্তি। বিগত কিছু খেলায় ফর্মের অবনতি দেখা গেলেও এই ডানহাতি ব্যাটার আত্মবিশ্বাসী যে একটি ভালো ইনিংস তাকে তার ছন্দে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ হোম সিরিজেও ফর্মে ফিরতে লড়াই করেছেন লিটন। ছন্দে ফিরতে লড়াইয়ের পরও মনে রাখতে হবে, ৮২টি টি-টোয়েন্টিতে ১২৫ ওভার স্ট্রাইক রেটে ১৮০০-র বেশি রান করেছেন লিটন। শুরুটা ভালো করতে পারলে নিজের দিনটিতে যেকোনো বোলিং রক্ষণভাগ গুঁড়িয়ে দিতে পারেন তিনি।
ব্যাটিং অর্ডারে আরেক সম্ভাবনাময় তারকা তৌহিদ হৃদয়। ডানহাতি এই ব্যাটার এরই মধ্যে তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে কিছু দুর্দান্ত খেলেছেন এবং সুযোগ পেলেই এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় দেখিয়েছেন।
টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের পরবর্তী ভরসা হয়ে উঠতে পারেন তৌহিদ। তিনি ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে আগামীতে অনেকবারই সুদিনের দেখা মিলতে পারে বাংলাদেশ দলের। ২২টি টি-টোয়েন্টিতে ১৩০-এর বেশি স্ট্রাইক রেট তৌহিদের, নামের পাশে রয়েছে দুটি হাফসেঞ্চুরি।
লোয়ার অর্ডারে ব্যাট ও বল দুই হাতেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন রিশাদ হোসেন। জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা অল্প কয়েকজন লেগ স্পিনারের মধ্যে তিনি একজন এবং তার ভালো খেলার প্রমাণ অনেকবারই দিয়েছেন তিনি। তার সবচেয়ে বড় সম্পদ ক্লিন শট মারার ক্ষমতা।
১৭ ম্যাচে ৭ ইনিংসে ১৩৫-এর বেশি স্ট্রাইক রেটের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলার হিসেবে ১৫ উইকেটও নিয়েছেন রিশাদ। লেট অর্ডারে প্রতিপক্ষ বোলারদের দুঃস্বপ্ন হতে পারেন তিনি। আবার বল হাতে যেকোনো সময় উইকেটে ধস নামাতে পারেন। কিছু খরুচে হলেও অনন্য প্রতিভা বলা যায় তাকে।
এবারের বিশ্বকাপে মুস্তাফিজুর রহমানের ওপরও চোখ থাকবে সবার। কেন না সম্প্রতি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ফিজ প্রমাণ করে দিয়েছেন যে এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি, এখনো দেওয়ার আছে অনেক কিছু। আইপিএলে প্রথমবারের মতো নিয়েছেন চার উইকেট।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সেরা বোলিং ফিগারের নতুন রেকর্ড গড়েন। এই সফল পারফরম্যান্স বিশ্বকাপে তাকে অনুপ্রাণিত করবে।
বিশ্বকাপের ময়দানে পা রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দুজনই সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজেদের নিয়ে আশা জানিয়েছিলেন। তবে এই তারকারা যদি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের জন্য এবারের বিশ্বকাপ দারুণ একটি টুর্নামেন্ট হতে পারে।