ঢাকা ০১:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘আত্মগোপনে’ থেকে কুমিল্লার জমি বিক্রি করলেন নাঈমুল ইসলাম খান

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০২:৫১:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ‘আত্মগোপনে’ রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেসসচিব নাঈমুল ইসলাম খান। এ অবস্থায় কমিশনের মাধ্যমে কুমিল্লা নগরীর নিজের জমি বিক্রি করেছেন তিনি।

গত ১ সেপ্টেম্বর ও ৪ সেপ্টেম্বর তিনি কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় মৌজার বাগিচাগাঁও এলাকার তার মালিকানাধীন ১ দশমিক ৭৫ শতক এবং অপরটি ২ শতকসহ মোট ৩.৭৫ শতকের দুটি জমি পৌনে এক কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। দুই জমির একটি ৩৫ লাখ অপরটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যে দলিল সম্পন্ন হয়।

ঢাকার বনশ্রী এলাকার একটি বাসায় কমিশনের মাধ্যমে সাফকবলা দলিল হয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন কুমিল্লা সদরের তৎকালীন অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবরেজিস্টার দীপংকর চন্দ্র দাস। এর পরপরই বিষয়টি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার একটি এবং বুধবার আরেকটি দলিল সম্পন্ন করা হয়। নাঈমুল ইসলাম খান কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় মৌজার বাগিচাগাঁও এলাকায় ১.৭৫ শতাংশ ও ২ শতাংশ জমি বিক্রি করেন।

কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী খোসনেহার বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার বনশ্রী এলাকার একটি বাসায় কমিশনের মাধ্যমে সাফকবলা দলিল সম্পন্ন হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় কমিশন গিয়েছি। কমিশনের সদস্য হিসেবে জমি রেজিস্ট্রির দিন বনশ্রীর ওই বাসায় খোসনেহার বেগম। সেসময় উপস্থিত ছিলেন নাঈমুল ইসলাম খানও। জমি দুটি কিনেছেন কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি।

কুমিল্লা সদরের সাবরেজিস্ট্রার লুৎফুন্নাহার লতা ঢাকা পোস্টকে বলেন বলেন, দলিলের সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সদরের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকে। বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি অবগত নই।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কুমিল্লা সদরের তৎকালীন অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সাবরেজিস্ট্রার (ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার) দীপংকর চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশনের আইনের তথ্য গোপন রেখে দলিল দাতার (নাঈমুল ইসলাম খান) অসুস্থতার কথা বলে কমিশনের জন্য আবেদন করেন নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা দলিল গ্রহীতা রুহুল আমিন। সেই প্রেক্ষিতে সদর ভূমি অফিসের সহকারী খোসনেহার বেগমকে কমিশনের দায়িত্ব দিলে তিনি দলিল দাতার নিকট ঢাকার বনশ্রী এলাকায় যান। দুটি দলিলে ৩.৭৫ জমির মূল্য ৭৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দলিল দাতা নাঈমুল ইসলাম খান একাধিক মামলার আসামি কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় আমাদের জানা ছিল না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এমন কোনো চিঠিও পাইনি। বিষয়টি গতকাল থেকে শুনছি।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেসসচিব নাঈমুল ইসলাম খান ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তার (নাঈমুল ইসলাম খান) বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকা, রংপুর ও বগুড়ায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যেই কমিশনের মাধ্যমে সাফকবলা (জমি, ফ্ল্যাট বা প্লট কেনাবেচা) দলিল করে জমি বিক্রি করেছেন নাঈমুল ইসলাম খান।

এ ব্যাপারে জানার জন্য একাধিকবার নাঈমুল ইসলাম খানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বোয়ালমারীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত 

‘আত্মগোপনে’ থেকে কুমিল্লার জমি বিক্রি করলেন নাঈমুল ইসলাম খান

আপডেট সময় : ০২:৫১:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ‘আত্মগোপনে’ রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেসসচিব নাঈমুল ইসলাম খান। এ অবস্থায় কমিশনের মাধ্যমে কুমিল্লা নগরীর নিজের জমি বিক্রি করেছেন তিনি।

গত ১ সেপ্টেম্বর ও ৪ সেপ্টেম্বর তিনি কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় মৌজার বাগিচাগাঁও এলাকার তার মালিকানাধীন ১ দশমিক ৭৫ শতক এবং অপরটি ২ শতকসহ মোট ৩.৭৫ শতকের দুটি জমি পৌনে এক কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। দুই জমির একটি ৩৫ লাখ অপরটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যে দলিল সম্পন্ন হয়।

ঢাকার বনশ্রী এলাকার একটি বাসায় কমিশনের মাধ্যমে সাফকবলা দলিল হয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন কুমিল্লা সদরের তৎকালীন অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবরেজিস্টার দীপংকর চন্দ্র দাস। এর পরপরই বিষয়টি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার একটি এবং বুধবার আরেকটি দলিল সম্পন্ন করা হয়। নাঈমুল ইসলাম খান কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় মৌজার বাগিচাগাঁও এলাকায় ১.৭৫ শতাংশ ও ২ শতাংশ জমি বিক্রি করেন।

কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী খোসনেহার বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার বনশ্রী এলাকার একটি বাসায় কমিশনের মাধ্যমে সাফকবলা দলিল সম্পন্ন হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় কমিশন গিয়েছি। কমিশনের সদস্য হিসেবে জমি রেজিস্ট্রির দিন বনশ্রীর ওই বাসায় খোসনেহার বেগম। সেসময় উপস্থিত ছিলেন নাঈমুল ইসলাম খানও। জমি দুটি কিনেছেন কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি।

কুমিল্লা সদরের সাবরেজিস্ট্রার লুৎফুন্নাহার লতা ঢাকা পোস্টকে বলেন বলেন, দলিলের সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সদরের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকে। বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি অবগত নই।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কুমিল্লা সদরের তৎকালীন অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সাবরেজিস্ট্রার (ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার) দীপংকর চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশনের আইনের তথ্য গোপন রেখে দলিল দাতার (নাঈমুল ইসলাম খান) অসুস্থতার কথা বলে কমিশনের জন্য আবেদন করেন নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা দলিল গ্রহীতা রুহুল আমিন। সেই প্রেক্ষিতে সদর ভূমি অফিসের সহকারী খোসনেহার বেগমকে কমিশনের দায়িত্ব দিলে তিনি দলিল দাতার নিকট ঢাকার বনশ্রী এলাকায় যান। দুটি দলিলে ৩.৭৫ জমির মূল্য ৭৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দলিল দাতা নাঈমুল ইসলাম খান একাধিক মামলার আসামি কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় আমাদের জানা ছিল না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এমন কোনো চিঠিও পাইনি। বিষয়টি গতকাল থেকে শুনছি।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেসসচিব নাঈমুল ইসলাম খান ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তার (নাঈমুল ইসলাম খান) বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকা, রংপুর ও বগুড়ায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যেই কমিশনের মাধ্যমে সাফকবলা (জমি, ফ্ল্যাট বা প্লট কেনাবেচা) দলিল করে জমি বিক্রি করেছেন নাঈমুল ইসলাম খান।

এ ব্যাপারে জানার জন্য একাধিকবার নাঈমুল ইসলাম খানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।