ঢাকা ০২:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সালথায় আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতনের নিয়ে বয়ানে চাকরি গেল ইমামের

 

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় জুমার নামাজের বয়ানে আওয়ামী লীগ সরকারের জুমুল-নির্যাতন নিয়ে কথা বলার কারণে হাফেজ মাওলানা মুজাহিদুল হক (৩৫) নামে এক ইমামের চাকরি যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরাটিয়া গ্রামের মধ্যপাড়া জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। ইমামের চাকরিচ্যুতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

মুরাটিয়া গ্রামের মুসল্লিরা জানান, মধ্যপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাঝারদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বরের ছেলে মো. স্বপন মাতুব্বর। আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে বিধায় তাকে মসজিদের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৯ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজের বয়ানে মসজিদের ইমাম মুজাহিদুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন নিয়ে কথা বলেন। এ সময় সভাপতির সমর্থকরা ইমামের বয়ানে বাধা দেন। পরে নামাজ শেষে সভাপতি ইমামকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়।

আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ভুক্তভোগী ইমাম হাফেজ মাওলানা মুজাহিদুল হক বলেন, মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদে গত ৮মাস ধরে ইমামতি করছি। গত ৯ আগস্ট জমার নামাজের বয়ানে জালিমের জুলুম-নির্যাতনের পরিণাম কি হয়, তা নিয়ে কথা বলি। সেই সাথে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হামলার বিষয়টি তুলে ধরি।

এ সময় কালাম নামে এক মুসল্লি বয়ানে বাধা দেন। তখন আরেক মুসল্লি আমার পক্ষে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মসজিদের সভাপতি। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় আমি বয়ান বন্ধ করে দেই। একপর্যায় নামাজ শেষে সভাপতি আমাকে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। পরে আমি চলে আসছি। তিনি দু:খ প্রকাশ করে আরো বলেন, বর্তমান সমাজে সত্য কথা বলারও ক্ষমা নেই আমাদের। সত্য কথা বললেই পেটে লাথি দিতে চায় সবাই।

বিষয়টি মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি মো. স্বপন মাতুব্বরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্বপনের বাবা মাঝারদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বর বলেন, ইমাম সাহেব ধর্মীয় বয়ান বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতেছিল। পরে পোলাপান ঝামেলা বাধালে তিনি চলে যান। আমরা তাকে চাকরিচ্যুত করেনি। তিনি একাই চলে গেছেন। এখন আমরা ভাল একজন ইমাম রাখবো।

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেক আলেম-ওলামা পোস্ট দিয়েছেন। সালথা মডেল মসজিদের ইমাম মুফতী রবিউল ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদের ইমামকে জোরপূর্বক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত মসজিদ কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ তাওহীদী জনতা সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন। বেলায়েত হোসেন নামে একজন ইসলামিক লেখক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মসজিদের সভাপতি নাকি হুমকি দিয়ে বলেছে, যেসব আলেম এসব নিয়ে কথা বলবে তাকে বিলের পানিতে চুবাবো। সালথার মতো আলেম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদের সভাপতির এমন আচরণ কেন?।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বোয়ালমারীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত 

সালথায় আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতনের নিয়ে বয়ানে চাকরি গেল ইমামের

আপডেট সময় : ০১:৫৭:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

 

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় জুমার নামাজের বয়ানে আওয়ামী লীগ সরকারের জুমুল-নির্যাতন নিয়ে কথা বলার কারণে হাফেজ মাওলানা মুজাহিদুল হক (৩৫) নামে এক ইমামের চাকরি যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরাটিয়া গ্রামের মধ্যপাড়া জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। ইমামের চাকরিচ্যুতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

মুরাটিয়া গ্রামের মুসল্লিরা জানান, মধ্যপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাঝারদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বরের ছেলে মো. স্বপন মাতুব্বর। আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে বিধায় তাকে মসজিদের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৯ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজের বয়ানে মসজিদের ইমাম মুজাহিদুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন নিয়ে কথা বলেন। এ সময় সভাপতির সমর্থকরা ইমামের বয়ানে বাধা দেন। পরে নামাজ শেষে সভাপতি ইমামকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়।

আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ভুক্তভোগী ইমাম হাফেজ মাওলানা মুজাহিদুল হক বলেন, মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদে গত ৮মাস ধরে ইমামতি করছি। গত ৯ আগস্ট জমার নামাজের বয়ানে জালিমের জুলুম-নির্যাতনের পরিণাম কি হয়, তা নিয়ে কথা বলি। সেই সাথে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হামলার বিষয়টি তুলে ধরি।

এ সময় কালাম নামে এক মুসল্লি বয়ানে বাধা দেন। তখন আরেক মুসল্লি আমার পক্ষে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মসজিদের সভাপতি। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় আমি বয়ান বন্ধ করে দেই। একপর্যায় নামাজ শেষে সভাপতি আমাকে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। পরে আমি চলে আসছি। তিনি দু:খ প্রকাশ করে আরো বলেন, বর্তমান সমাজে সত্য কথা বলারও ক্ষমা নেই আমাদের। সত্য কথা বললেই পেটে লাথি দিতে চায় সবাই।

বিষয়টি মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি মো. স্বপন মাতুব্বরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্বপনের বাবা মাঝারদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বর বলেন, ইমাম সাহেব ধর্মীয় বয়ান বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতেছিল। পরে পোলাপান ঝামেলা বাধালে তিনি চলে যান। আমরা তাকে চাকরিচ্যুত করেনি। তিনি একাই চলে গেছেন। এখন আমরা ভাল একজন ইমাম রাখবো।

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেক আলেম-ওলামা পোস্ট দিয়েছেন। সালথা মডেল মসজিদের ইমাম মুফতী রবিউল ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদের ইমামকে জোরপূর্বক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত মসজিদ কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ তাওহীদী জনতা সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন। বেলায়েত হোসেন নামে একজন ইসলামিক লেখক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মসজিদের সভাপতি নাকি হুমকি দিয়ে বলেছে, যেসব আলেম এসব নিয়ে কথা বলবে তাকে বিলের পানিতে চুবাবো। সালথার মতো আলেম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদের সভাপতির এমন আচরণ কেন?।