গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে সৃষ্টি হয় সাময়িক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির। এসময় দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেও পরিচালক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে হাসপাতালে গিয়েও দেখা মেলেনি তার। পরিচালক কখন হাসপাতালে আসেন বা থাকেন সে বিষয়ে সঠিক তথ্যও কেউ দিতে পারেনি।
হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক নানা কারণবশত ভয়ে অনেকে হাসপাতালে আসছেন না। তবে ৭ আগস্টের পর কেউ কেউ আসা শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, ৫ তারিখ সরকারের পদত্যাগের পর রোগীর চাপ অনেক বেশি বেড়েছে। এত রোগী এসেছে যে হিসাব রাখা সম্ভব হয়নি।
৫ আগস্ট হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দাউদকান্দি থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে ১০ বছর বয়সি পারভেজ।
পারভেজের মা পারুল জানান, চিকিৎসা পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে তার থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অংকের রশিদ দেখিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে। যারা নিচ্ছেন পরে তাদের আর দেখতে পাননি। সেই টাকার বিনিময়ে কোনো সেবাও পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল রেজাউল রহমান বলেন, ‘গত একমাসে শুক্রবার বাদে আমি কোনোদিন অফিস বাদ দিইনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকে আসছেন না এটা ঠিক। তাদের অফিসে আসার জন্য অফিসিয়ালি বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইমার্জেন্সি ডাক্তার এবং অন্যান্য ডাক্তাররা ডিউটি করছেন। আউটডোরে ৬ তারিখ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা কম ছিল। তবে ৭ আগস্ট থেকে অনেকটা স্বাভাবিক। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই।’
বরং সাম্প্রতিক অবস্থায় ভয় না পেয়ে হাসপাতালে রোগী আসা বেড়েছে এটা ইতিবাচক বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে সেখানকার বহির্বিভাগে দায়িত্বরত আনসার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাইয়ের আন্দোলনের আগে যদি রোগী আসত ১০০ জন, এখন আসে ৬০ জন। ৫ তারিখের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকে আসেননি, যারা আগে ক্ষমতা দেখাত। ৭ আগস্টের পর কেউ কেউ আসছেন। তবে অনেক অধ্যাপক অনুপস্থিত। তারা কেউ চেম্বার করেন না এখনও। কোনো দূরের রোগী আসছে না। যারা আসছে বেশিরভাগই আশেপাশের।’
অন্যদিকে হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমরা খুব আতঙ্কে আছি। ৬ আগস্ট আমাদের গেটে তালা দেওয়া ছিল। পরদিন কয়েকটি তালা খুলে দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নাই। প্রশাসন থেকে নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কবে অফিসে ফিরব সেটা অনিশ্চিত।’