টেকনাফের সেন্টমার্টিন নৌরুটে ৭ দিন ধরে সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে টেকনাফের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে সেখানকার অন্তত ১০ হাজার বাসিন্দার মাঝে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলা সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
সম্প্রতি টেকনাফ সীমান্তের মিয়ানমারের ভেতর থেকে বারবার গোলাবর্ষণ হয়। এর ফলে নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নৌপথে এই দ্বীপটিতে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বীপবাসীর আশা, শিগগিরই জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় খাদ্যবাহী ট্রলার এসে সেন্টমার্টিনে পৌঁছাবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের মধ্যে নৌযান লক্ষ্য করে কয়েক দফা গুলি ছোড়া হয়েছে। এ অবস্থায় সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করা নৌযানগুলো টেকনাফে যেতে পারছে না। ফলে কাঁচা বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে দ্বীপটিতে। এ ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে দ্বীপের কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। ফলে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিতে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধের আঁচ লাগছে সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে। ট্রলারগুলোকে সীমান্তের ওপার থেকে কারা গুলি করছে, তাও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ৫ জুন সেন্টমার্টিনে উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে কর্মকর্তারা ট্রলারে করে টেকনাফ ফিরছিলেন। ট্রলারটিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ পুলিশের একটি দল ছিল। তখন মিয়ানমারের ভেতর থেকে ট্রলারটিকে লক্ষ্য করে ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।’
ওই ঘটনায় ভয়ে মানুষ এ রুটে যাতায়াতের সাহস পাচ্ছে না বলে জানান সেন্টমার্টিন স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে আসার আর কোনো বিকল্প রুটও নেই।’
তবে দ্বীপটিতে খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর বিকল্প প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) নিরাপত্তা জোরদার করে টেকনাফ ঘাটে থাকা ট্রলারগুলোতে করে সেন্টমার্টিনে পণ্য পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে কক্সবাজার ঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজে করে দ্বীপটিতে পণ্য নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’
সেন্টমার্টিনবাসীর খাবার নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে, বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ট্রলারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’