ঢাকা ০৪:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সারাদেশে অভিযান অব্যাহত, ফেসবুকে পোস্টের জেরেও আটকের অভিযোগ

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৪:০৬:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

 

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় গ্রেফতার ও মামলার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সহিংসতার ঘটনায় শুধু ফেসবুকে পোস্ট দেয়া কিংবা নিহতদের নিয়ে কথা বলার অভিযোগেও আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দু’জন সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম ও আরিফ সোহেলকে সাদা পোশাকের অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

ঢাকার পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত তাবাসসুম ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে তাদের হেফাজতে নেয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে আরিফ সোহেল সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এর আগে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আরো পাঁচজন সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো না হলেও পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।

পুলিশ দাবি করেছে, সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে তারা অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে গ্রেফতারের আতঙ্ক আর অভিযানের ভয়ে সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না এমন অনেকে ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্য জায়গায় সরে গেছেন বলে স্থানীয়রা কেউ কেউ দাবি করেছেন। ঢাকার যেসব এলাকায় এবার ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে তার মধ্যে এ এলাকাগুলোও রয়েছে।

উল্লেখ্য, কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জের ধরে গত ১৬ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে সহিংসতায় অন্তত ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

তবে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল রোববারই বলেছেন এবারের সহিংসতায় ১৪৭ জন মারা গেছে যার মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগ কর্মী। বাকীরা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

আবার এই সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে এ পর্যন্ত অন্তত ৯ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু পুরনো মামলার আসামি থাকলেও বাকিরা কোটা আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িত ছিলেন বলে দাবি করছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশ শনিবার পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন থানায় ২০৭টি মামলা দায়েরের কথা জানিয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে র‍্যাবের হাতেও গ্রেফতার হয়েছেন তিনশ জনের মতো। অভিযান এখনো চলমান রয়েছে।

মধ্যরাতে বিভিন্ন এলাকায় ব্লকরেইড দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব অভিযানে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। সহিংসতায় জড়িত না থাকলেও শিক্ষার্থী পরিচয় পেলেই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে, এমন অভিযোগও উঠেছে।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র (ডিসি মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, সব ডকুমেন্টস পর্যালোচনার পরই নিশ্চিত হয়ে একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা আটকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জুনায়েদ আলম বলেন, ডিবি পুলিশ যাদের আটক করছে তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আটক করছে, ঢালাওভাবে কোনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

গ্রেফতার ও মামলা চলছেই
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঘটা বিক্ষোভ, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতায় ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতারের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এমনকি শিক্ষার্থী ছাড়াও অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে যারা বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপার এলাকায় শেখ নাইমুল হোসাইন মিল্টনকে বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ঢাকার একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কোল্ড স্টোরেজে আগুন দেয়া ও চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

তার ভাই নাজমুল হোসাইন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তার ভাইকে ‘পুলিশ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাস্টমারদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল’।

তিনি বলেন, আমার ভাই মারামারির মধ্যেই ছিল না। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। ভাই ছিল দোকানে। ওই অবস্থা থেকেই তারে নিয়া গেছে।

এদিকে ১৬ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার যেসব এলাকায় সহিংসতা হয়েছে বিশেষ করে রামপুরা-বনশ্রী এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই মধ্যরাতে ‘ব্লক রেইড’ দিচ্ছে পুলিশ। এসব অভিযানে অনেককে আটক করা হয়েছে।

বনশ্রীর সি ব্লকের এক নম্বর রোডের বাসা থেকে বনশ্রী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক ও তার শিক্ষার্থী ছেলেকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।

বাড়ির কেয়ারটেকার আফতাব উদ্দিন জানিয়েছেন, শনিবার ওই দু’জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। আব্দুল হক শুক্রবার মসজিদে নিহতদের বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন বলে জানা গেছে। তবে কী ধরনের মন্তব্য করেছিলেন তা জানা যায়নি।

কাছেই একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মনির হোসেন জানান, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ার কারণে তাকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ।

তিনি বলেন, থানায় ধরে নিয়ে গেছে। আমি ফেসবুকে পোস্ট দিছিলাম বলছিল তারা। পরে চেক করে ছেড়ে দিয়েছে আমাকে।’

বনশ্রী এলাকার মধ্যপাড়া, ভুইয়াপাড়া এবং দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার অধিবাসীরা জানিয়েছেন গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে বিশেষ অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, ১৮ জুলাই রামপুরায় বিটিভি ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর পরদিন রামপুরা থানায় আক্রমণের ঘটনার পর ব্যাপক গোলাগুলির চিহ্ন এখনো দোকানপাট ও বাড়িঘরে স্পষ্ট।

রোববার থানার কাছেই একটি সেলুনের সামনের দিকে বেশ কয়েকটি গুলির দাগ দেখা যায়। গুলি দুটি কাঁচের দেয়ার ভেদ করে গিয়ে ভেতরের দেয়ালে গিয়ে লেগেছে।

অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের একজন অধিবাসী জানিয়েছেন, বসিলা এলাকায় ব্যাপক অভিযান চলছে গত কয়েকদিন ধরে। ওই এলাকায় সহিংসতার সময় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি অনেক বাড়ির ছাদে লেগেছে বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।

ওদিকে ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও দোহারসহ কয়েকটি এলাকাতেও পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে।

নারায়ণগঞ্জে ২৪ মামলায় প্রায় ৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে গত কয়েকদিনে। গাজীপুরে মামলা হয়েছে ৩৯টি এবং আটক হয়েছে প্রায় ৪০০ জন।

চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরে মোট ৩০টি মামলায় প্রায় ৯০০ ব্যক্তিকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। বগুড়ায় আটক হয়েছে প্রায় ৩০০ জন আর মামলা হয়েছে ১৫টির মতো।

আর ঢাকা মহানগর পুলিশ আগেই জানিয়েছে যে ২০০ বেশি মামলায় তারা আড়াই হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে।

যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীও রয়েছেন।

পটুয়াখালীর টিটো হোসেন বলেন, তাদের গ্রামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তাদের খুঁজছে।

অন্যদিকে গত শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিকেও ঢাকার আদালতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গ্রেফতারকৃতদের অনেককে যেমন সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয়েছে, আবার কাউকে কাউকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

কিসের ভিত্তিতে এত গ্রেফতার
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র (ডিসি মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, গ্রেফতার যা হচ্ছে তার সবই সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ আছে আমাদের কাছে। এছাড়া আরো কয়েকটি মাধ্যমে আমরা ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করে জড়িতদের চিহ্নিত করি। এরপর সেগুলো সোর্সদের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করা হয়। এভাবে কয়েক ধাপে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর একজন ব্যক্তিকে আটকের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর অভিযান পরিচালিত হয়।’

উল্লেখ্য, এবার কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগ কোটা ৯৩ শতাংশ চাকরি মেধা ভিত্তিক দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে একটি রায় দিয়েছে। এর ভিত্তিতে ইতোমধ্যে সরকার প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।

এর আগে বাংলাদেশে ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনের পর সরকার কোটা বাতিল করে যে পরিপত্র দিয়েছিল সেটি গত ৫ জুন বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে রিট করার পরিপ্রেক্ষিতে ওই রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট।

পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার পক্ষ। কিন্তু এর মধ্যেই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করে।

২ জুলাই থেকে এ নিয়ে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। পরে বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৬ জুলাই সহিংসতায় আবু সাঈদসহ ছয়জন মারা যায়। এরপর ১৯ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত সহিংসতার মৃতের সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়ে যায় বলে গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

এ সময় নরসিংদী কারাগারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাতেও হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

সরকার এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করলেও তারা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। উভয় দলই সরকারের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে গুলি করে শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগ এনেছে।

সূত্র : বিবিসি

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

সারাদেশে অভিযান অব্যাহত, ফেসবুকে পোস্টের জেরেও আটকের অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৪:০৬:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

 

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় গ্রেফতার ও মামলার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সহিংসতার ঘটনায় শুধু ফেসবুকে পোস্ট দেয়া কিংবা নিহতদের নিয়ে কথা বলার অভিযোগেও আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দু’জন সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম ও আরিফ সোহেলকে সাদা পোশাকের অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

ঢাকার পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত তাবাসসুম ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে তাদের হেফাজতে নেয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে আরিফ সোহেল সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এর আগে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আরো পাঁচজন সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো না হলেও পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।

পুলিশ দাবি করেছে, সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে তারা অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে গ্রেফতারের আতঙ্ক আর অভিযানের ভয়ে সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না এমন অনেকে ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্য জায়গায় সরে গেছেন বলে স্থানীয়রা কেউ কেউ দাবি করেছেন। ঢাকার যেসব এলাকায় এবার ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে তার মধ্যে এ এলাকাগুলোও রয়েছে।

উল্লেখ্য, কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জের ধরে গত ১৬ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে সহিংসতায় অন্তত ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

তবে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল রোববারই বলেছেন এবারের সহিংসতায় ১৪৭ জন মারা গেছে যার মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগ কর্মী। বাকীরা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

আবার এই সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে এ পর্যন্ত অন্তত ৯ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু পুরনো মামলার আসামি থাকলেও বাকিরা কোটা আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িত ছিলেন বলে দাবি করছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশ শনিবার পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন থানায় ২০৭টি মামলা দায়েরের কথা জানিয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে র‍্যাবের হাতেও গ্রেফতার হয়েছেন তিনশ জনের মতো। অভিযান এখনো চলমান রয়েছে।

মধ্যরাতে বিভিন্ন এলাকায় ব্লকরেইড দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব অভিযানে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। সহিংসতায় জড়িত না থাকলেও শিক্ষার্থী পরিচয় পেলেই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে, এমন অভিযোগও উঠেছে।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র (ডিসি মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, সব ডকুমেন্টস পর্যালোচনার পরই নিশ্চিত হয়ে একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা আটকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জুনায়েদ আলম বলেন, ডিবি পুলিশ যাদের আটক করছে তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আটক করছে, ঢালাওভাবে কোনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

গ্রেফতার ও মামলা চলছেই
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঘটা বিক্ষোভ, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতায় ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতারের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এমনকি শিক্ষার্থী ছাড়াও অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে যারা বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপার এলাকায় শেখ নাইমুল হোসাইন মিল্টনকে বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ঢাকার একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কোল্ড স্টোরেজে আগুন দেয়া ও চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

তার ভাই নাজমুল হোসাইন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তার ভাইকে ‘পুলিশ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাস্টমারদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল’।

তিনি বলেন, আমার ভাই মারামারির মধ্যেই ছিল না। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। ভাই ছিল দোকানে। ওই অবস্থা থেকেই তারে নিয়া গেছে।

এদিকে ১৬ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার যেসব এলাকায় সহিংসতা হয়েছে বিশেষ করে রামপুরা-বনশ্রী এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই মধ্যরাতে ‘ব্লক রেইড’ দিচ্ছে পুলিশ। এসব অভিযানে অনেককে আটক করা হয়েছে।

বনশ্রীর সি ব্লকের এক নম্বর রোডের বাসা থেকে বনশ্রী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক ও তার শিক্ষার্থী ছেলেকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।

বাড়ির কেয়ারটেকার আফতাব উদ্দিন জানিয়েছেন, শনিবার ওই দু’জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। আব্দুল হক শুক্রবার মসজিদে নিহতদের বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন বলে জানা গেছে। তবে কী ধরনের মন্তব্য করেছিলেন তা জানা যায়নি।

কাছেই একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মনির হোসেন জানান, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ার কারণে তাকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ।

তিনি বলেন, থানায় ধরে নিয়ে গেছে। আমি ফেসবুকে পোস্ট দিছিলাম বলছিল তারা। পরে চেক করে ছেড়ে দিয়েছে আমাকে।’

বনশ্রী এলাকার মধ্যপাড়া, ভুইয়াপাড়া এবং দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার অধিবাসীরা জানিয়েছেন গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে বিশেষ অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, ১৮ জুলাই রামপুরায় বিটিভি ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর পরদিন রামপুরা থানায় আক্রমণের ঘটনার পর ব্যাপক গোলাগুলির চিহ্ন এখনো দোকানপাট ও বাড়িঘরে স্পষ্ট।

রোববার থানার কাছেই একটি সেলুনের সামনের দিকে বেশ কয়েকটি গুলির দাগ দেখা যায়। গুলি দুটি কাঁচের দেয়ার ভেদ করে গিয়ে ভেতরের দেয়ালে গিয়ে লেগেছে।

অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের একজন অধিবাসী জানিয়েছেন, বসিলা এলাকায় ব্যাপক অভিযান চলছে গত কয়েকদিন ধরে। ওই এলাকায় সহিংসতার সময় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি অনেক বাড়ির ছাদে লেগেছে বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।

ওদিকে ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও দোহারসহ কয়েকটি এলাকাতেও পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে।

নারায়ণগঞ্জে ২৪ মামলায় প্রায় ৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে গত কয়েকদিনে। গাজীপুরে মামলা হয়েছে ৩৯টি এবং আটক হয়েছে প্রায় ৪০০ জন।

চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরে মোট ৩০টি মামলায় প্রায় ৯০০ ব্যক্তিকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। বগুড়ায় আটক হয়েছে প্রায় ৩০০ জন আর মামলা হয়েছে ১৫টির মতো।

আর ঢাকা মহানগর পুলিশ আগেই জানিয়েছে যে ২০০ বেশি মামলায় তারা আড়াই হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে।

যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীও রয়েছেন।

পটুয়াখালীর টিটো হোসেন বলেন, তাদের গ্রামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তাদের খুঁজছে।

অন্যদিকে গত শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিকেও ঢাকার আদালতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গ্রেফতারকৃতদের অনেককে যেমন সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয়েছে, আবার কাউকে কাউকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

কিসের ভিত্তিতে এত গ্রেফতার
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র (ডিসি মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, গ্রেফতার যা হচ্ছে তার সবই সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ আছে আমাদের কাছে। এছাড়া আরো কয়েকটি মাধ্যমে আমরা ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করে জড়িতদের চিহ্নিত করি। এরপর সেগুলো সোর্সদের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করা হয়। এভাবে কয়েক ধাপে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর একজন ব্যক্তিকে আটকের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর অভিযান পরিচালিত হয়।’

উল্লেখ্য, এবার কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগ কোটা ৯৩ শতাংশ চাকরি মেধা ভিত্তিক দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে একটি রায় দিয়েছে। এর ভিত্তিতে ইতোমধ্যে সরকার প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।

এর আগে বাংলাদেশে ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনের পর সরকার কোটা বাতিল করে যে পরিপত্র দিয়েছিল সেটি গত ৫ জুন বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে রিট করার পরিপ্রেক্ষিতে ওই রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট।

পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার পক্ষ। কিন্তু এর মধ্যেই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করে।

২ জুলাই থেকে এ নিয়ে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। পরে বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৬ জুলাই সহিংসতায় আবু সাঈদসহ ছয়জন মারা যায়। এরপর ১৯ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত সহিংসতার মৃতের সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়ে যায় বলে গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

এ সময় নরসিংদী কারাগারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাতেও হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

সরকার এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করলেও তারা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। উভয় দলই সরকারের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে গুলি করে শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগ এনেছে।

সূত্র : বিবিসি