জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে আমদানি পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগে কঠোরভাবে পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (১২ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
গত ৮ মে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ভারতীয় খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার এবং যথাযথ পরিদর্শন প্রোটোকল ছাড়া আমদানিকৃত পণ্য এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) বা অন্যান্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মতো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিদেশ থেকে আসা পণ্য পরিদর্শন ও পরীক্ষা পরিচালনা করা অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান পরাধীন সরকার দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের যথাযথভাবে পরীক্ষা করবে কিনা তা নিয়ে জনগণ যথেষ্ট সন্দিহান।’
তিনি আরও বলেন, দেশের সকল নাগরিককে নিজ উদ্যোগে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমদানি করা পণ্য যথাযথভাবে পরিদর্শন না করা হলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থযুক্ত সব ধরনের পণ্য আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
ইউরোপে ভারতীয় খাদ্যপণ্যের ওপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় ৫২৭টি পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক রয়েছে বলে বৈঠকে আলোচনায় জানানো হয়।
২৩ এপ্রিল প্রকাশিত রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ফখরুল বলেন, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি রয়েছে এমন অভিযোগে হংকং এবং সিঙ্গাপুরে এমডিএইচ এবং এভারেস্ট ব্র্যান্ডের কিছু পণ্য বিক্রি বন্ধ হওয়ায় এসব পণ্যের গুণমান পরীক্ষার বিশদ সরবরাহ করতে বলেছে ভারতের মশলা রপ্তানি নিয়ন্ত্রক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ অবস্থায় সরকারকে অবশ্যই বাজারে প্রবেশের আগে প্রতিটি আমদানিকৃত পণ্যের গুণগত মান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি হাসপাতালগুলো বিশেষ করে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোর অপরিচ্ছন্ন অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের উপস্থিতির যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পেতে বাধা সৃষ্টি করে বলে মনে করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সরকারি হাসপাতালের আশপাশে অসংখ্য নিম্নমানের ক্লিনিক ও বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের মতো অসংক্রামক রোগে।
কিন্তু সরকার এসব রোগ মোকাবিলায় মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ বরাদ্দ করে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে জনস্বাস্থ্যের একটি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে যে, দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য রাখে না।
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। এই প্রচলিত ক্যান্সারের মূল কারণ অনিরাপদ খাদ্য।
রাজনীতিকরণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, যথাযথ কাজের সুযোগ বা দক্ষতার স্বীকৃতির অভাবে অনেক মেধাবী ব্যক্তি দেশ ছাড়ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কে কখন আসছে আর কে আসছে না তা নিয়ে বিএনপি আগ্রহী নয়।
বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের দলের আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে এবং আমরা সেই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের রাজনীতিও মানুষের জন্য।’