নিজেদের ইচ্ছেমতো ওষুধের দাম বাড়ানো বন্ধে স্বাস্থ্য সচিব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি মো. মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে ২০২৩ সালের ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্টের ৩০ ধারা অনুযায়ী ওষুধের দাম নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
এছাড়া রুলে একই আইনের ৭৬ ধারা অনুযায়ী একটি বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাবের) করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এমন নির্দেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় এবং সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ ও আনিচ উল মাওয়া।
পরে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, খেয়াল খুশি মতো ওষুধের দাম বাড়ানো বন্ধে স্বাস্থ্যসচিব ও ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তিনি আরও বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে বলা হয়েছে যাতে সরকারের অনুমোদন ব্যতীত কাঁচামাল আমদানি করতে না পারে।
এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
‘দুই সপ্তাহে ওষুধের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১৪০ শতাংশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করে ক্যাব।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই মাসে দেশের বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়েছে। অন্তত ৫০ ধরনের ওষুধের দাম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহেও দাম বাড়ানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ওষুধের। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ডায়াবেটিসের রোগীদের ইনসুলিন ও ইনজেকশনের দাম।
এছাড়া হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা, হাঁপানিসহ বিভিন্ন ওষুধ এবং ভিটামিনের দামও বেড়েছে। বাদ যায়নি জ্বর-সর্দির ট্যাবলেট-ক্যাপসুল, বিভিন্ন সিরাপও।
বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বিক্রি থেকে আয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দাম বাড়ানোর হার অস্বাভাবিক।
এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে কোম্পানিগুলো ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছে।
এসময় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ কোম্পানিগুলোর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, সরকার একটি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ওষুধের দাম নির্ধারণ করবে। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে সরকার এ ধরনের কোনো গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেনি।
দ্যা ড্রাগস অ্যক্ট-১৯৪০ ও দ্যা ড্রাগস (কন্ট্রোল) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২-তেও একই ধরনের বিধান রয়েছে।
একইসঙ্গে ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট-২০২৩ সরকার ওষুধের দাম নির্ধারণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
গত ১৫ মাসে ১১৭টি ওষুধের দাম ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো দৃষ্টিপাত করেনি।
ওষেুধের দাম বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ এবং পর্বেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপিরিচালকও ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালকের।
কিন্তু তারা ওষুধের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।