দেশে চলমান তাপপ্রবাহ আগামী সোমবার (২২ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে জানিয়ে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে, টানা চতুর্থ দিনের মতো দেশের ও মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) এ জেলায় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, শুক্রবার বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৭%।
বেশ কিছুদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এছাড়াও গত বুধবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত মঙ্গলবার বিকেলে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
অর্থাৎ, গত মঙ্গলবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত একটানা চার দিন দেশের ও মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হচ্ছে। আরও তিন-চার দিন তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে, টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের জনজীবন। দিনভর তীব্র রোদে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। জেলা শহরের সড়কে মানুষজনের চলাচল কমে গেছে।
এই গরমে স্বস্তি পেতে ঠান্ডা শরবত, পানি, আইসক্রিম খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার বাসিন্দা লতিফুন নাহার বলেন, “প্রচণ্ড গরম পড়ছে। তাই বাচ্চা নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। ঘরের মধ্যে গরমে থাকা যায় না। জানি না কবে বৃষ্টির দেখা মিলবে। আবার ৩ বছর বয়সী বাচ্চাটাও গরমজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, “কয়েক দিন ধরে যে তাপ উঠছে তাতে দোকানে বসার অবস্থা নেই। পুরো দোকান দিয়ে মনে হচ্ছে আগুনের ভাপ বের হচ্ছে। এরাম গরমে বেচাবিক্রি কেমনে হবে।”
চলমান তাপপ্রবাহে সব শ্রেণির মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, “তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে।”
অন্যদিকে, ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, “বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী আরও কিছুদিন তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এসময় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে।”
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা জানান, এই তীব্র তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য সতর্কতায় নানা নির্দেশনা জানিয়ে তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচার অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সূত্র : ইউএনবি