মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বীর শহীদদের স্মরণ করেছে বাঙ্গালী জাতি। ফুলেল শ্রদ্ধায় শোভিত হলো স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। শ্রদ্ধা জানাতে আসা সকলের চোখে-মুখে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা গড়ার দৃপ্ত শপথ।
মঙ্গলবার সকালে সভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ঢল নামে।
মঙ্গলবার ৫৪ তম ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উদযাপনের অংশ হিসেবে, রাষ্ট্রপতি প্রথমে ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক সকালে রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
৫৪ তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে ভুটানের রাজা এখন চার দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানই প্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ওয়াংচুক তার পত্নীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন। এর আগে ২০১৩ সালে রাজাও রাণী বাংলাদেশ সফর করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এই সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান এবং ভুটানের রাজাও স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইতে স্বাক্ষর করেন।
পরে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর দলের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
এ সময়ে দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও খাইরুজ্জমান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুল-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, সাংগঠনকি সম্পাদক আহমদ হোসেন, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের শ্রদ্ধা জানানো শেষে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানার নিয়ে জনতার ঢল নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। এরপর একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হল সমূহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হল সমূহ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাসদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রথিমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের প্রতি।
দিনের শুরুতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে জনসাধারনের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ঢল। আবাল, বৃদ্ধ-বনিতাসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ আসে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনের নিরাপত্তার স্বার্থে স্মৃতিসৌধ ও এর আশেপাশে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও তারা বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়ক-মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে নজরদাবী বৃদ্ধি করেন। ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকাকে নজরদারীর আওতায় নিয়ে আসা হয়। মহাসড়কে যান চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নজিরবীহিন তৎপরতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশের দিয়েই বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষ। সূত্র : বাসস