ঢাকা ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালুরঘাটে ১১,৫৬০ কোটি টাকার রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

 

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর বিদ্যমান পুরাতন সেতুর পাশে ১১,৫৬০.৭৭ কোটি টাকার নতুন রেল-কাম-সড়ক সেতু প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চলতি অর্থবছরের (অর্থবছর ২৫) তৃতীয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, দিনের বৈঠকে মোট আনুমানিক ২৪ হাজার ৪১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে ৭,৭৪৬.৬৬ কোটি টাকা, প্রকল্প সহায়তা থেকে ১৬,০১২.৩৩ কোটি টাকা ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৫৩.৯৫ কোটি টাকা আসবে।
অনুমোদিত চারটি প্রকল্পের মধ্যে দু’টি নতুন ও দু’টি সংশোধিত প্রকল্প। এছাড়া বৈঠকে ব্যয় না বাড়িয়ে সাতটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রেল-কাম-সড়ক সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ।
মোট ১১,৫৬০.৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৪,৪৩৫.৬২ কোটি টাকা আসবে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এবং বাকি ৭,১২৫.১৫ কোটি টাকা আসবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটিজ (ইডিপিএফ), কোরিয়া থেকে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, কালুরঘাটে বিদ্যমান সেতুটি পুরনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় এ ব্যাপারে নতুন প্রকল্পের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।তিনি বলেন, সরকার কক্সবাজারকে আরও উন্নত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর করতে চায়। এছাড়াও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সংলগ্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ জন্য সরকার মনে করেছে, এ ক্ষেত্রে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগের সুযোগ তৈরি করা। রেলপথ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে পুরানো ও জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারে না। এছাড়া মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে, এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি এ রুটের গুরুত্বও বাড়বে। ইতোমধ্যেই দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালুর মাধ্যমে ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ফলে পর্যটন নগরীর সঙ্গে নির্বিঘ্নে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বিদ্যমান পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে এবং এইভাবে কোরিয়ান সরকারের অর্থায়নে অনুমোদিত হয়েছে।
বর্তমানে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমের ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে নির্বিঘœ রেল যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নতুন সেতুটি নির্মিত হলে, এই অঞ্চলের বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত কল-কারখানার পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম হবে। মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০০ মিটার রেল-কাম-রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬.২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২.৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪.৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১.৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ।
অতিরিক্ত ৬,৫৭৩.৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় সংশোধিত মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নের অনুমোদন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটি একটি বড় প্রকল্প। প্রকল্পটির ভূ-রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। তিনি বলেন, এই বন্দরের অর্থায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চীন ও ভারতের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, মাতারবাড়ী বন্দরে প্রয়োজনীয় কাজ এখনো শুরু হয়নি এবং বন্দরের উন্নয়নে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
সভায় অনুমোদিত অন্য দুটি প্রকল্প হল- সাজেক রোড কানেক্টিভিটি, প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ৩৭৬.৯৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে দ্বিতীয় সংশোধিত ও ৫,৯০১.২২২ টাকা দিয়ে রেসিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (আরইইউটিডিপি)।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আ’লীগ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থা জাতিকে ধ্বংসের নীলনকশা

কালুরঘাটে ১১,৫৬০ কোটি টাকার রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

 

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর বিদ্যমান পুরাতন সেতুর পাশে ১১,৫৬০.৭৭ কোটি টাকার নতুন রেল-কাম-সড়ক সেতু প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চলতি অর্থবছরের (অর্থবছর ২৫) তৃতীয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, দিনের বৈঠকে মোট আনুমানিক ২৪ হাজার ৪১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে ৭,৭৪৬.৬৬ কোটি টাকা, প্রকল্প সহায়তা থেকে ১৬,০১২.৩৩ কোটি টাকা ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৫৩.৯৫ কোটি টাকা আসবে।
অনুমোদিত চারটি প্রকল্পের মধ্যে দু’টি নতুন ও দু’টি সংশোধিত প্রকল্প। এছাড়া বৈঠকে ব্যয় না বাড়িয়ে সাতটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রেল-কাম-সড়ক সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ।
মোট ১১,৫৬০.৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৪,৪৩৫.৬২ কোটি টাকা আসবে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এবং বাকি ৭,১২৫.১৫ কোটি টাকা আসবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটিজ (ইডিপিএফ), কোরিয়া থেকে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, কালুরঘাটে বিদ্যমান সেতুটি পুরনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় এ ব্যাপারে নতুন প্রকল্পের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।তিনি বলেন, সরকার কক্সবাজারকে আরও উন্নত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর করতে চায়। এছাড়াও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সংলগ্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ জন্য সরকার মনে করেছে, এ ক্ষেত্রে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগের সুযোগ তৈরি করা। রেলপথ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে পুরানো ও জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারে না। এছাড়া মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে, এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি এ রুটের গুরুত্বও বাড়বে। ইতোমধ্যেই দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালুর মাধ্যমে ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ফলে পর্যটন নগরীর সঙ্গে নির্বিঘ্নে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বিদ্যমান পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে এবং এইভাবে কোরিয়ান সরকারের অর্থায়নে অনুমোদিত হয়েছে।
বর্তমানে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমের ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে নির্বিঘœ রেল যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নতুন সেতুটি নির্মিত হলে, এই অঞ্চলের বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত কল-কারখানার পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম হবে। মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০০ মিটার রেল-কাম-রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬.২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২.৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪.৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১.৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ।
অতিরিক্ত ৬,৫৭৩.৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় সংশোধিত মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নের অনুমোদন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটি একটি বড় প্রকল্প। প্রকল্পটির ভূ-রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। তিনি বলেন, এই বন্দরের অর্থায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চীন ও ভারতের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, মাতারবাড়ী বন্দরে প্রয়োজনীয় কাজ এখনো শুরু হয়নি এবং বন্দরের উন্নয়নে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
সভায় অনুমোদিত অন্য দুটি প্রকল্প হল- সাজেক রোড কানেক্টিভিটি, প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ৩৭৬.৯৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে দ্বিতীয় সংশোধিত ও ৫,৯০১.২২২ টাকা দিয়ে রেসিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (আরইইউটিডিপি)।