বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ায় গত ১৮ জুলাই বাম চোখে গুলি লাগে কলেজ ছাত্র সামি’র। সেই থেকে এক চোখে দেখতে পান না। কয়েক দফা অস্ত্রোপচারের পরও চোখে এখনও গুলি রয়ে গেছে। চোখ থেকে গুলি বের করতে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে বলেছেন চিকিৎসক। কিন্তু এতো খরচ আসবে কোথা থেকে সেই চিন্তায় দিশেহারা সামি’র পরিবার।
মোস্তাহিদ হোসেন সামি (প্রায় ১৮) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের খড়মপুর এলাকার আক্তার হোসেন ভূইঁয়ার পুত্র। তিনি উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এই বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭টি পরীক্ষা দিয়েছেন। চোখের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এখন। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে তার। সারা জীবনের জন্য একটি চোখ হারানোর দুশ্চিন্তায় ভুগছে সামির পরিবার। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত স্বজনরাও।
সামি’র পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন সামি। তার চোখ, মুখসহ সারা শরীরে অন্তত ১৭টি ছররা গুলি (স্প্রিন্টার) লাগে। দুটি স্প্রিন্টার বাম চোখে ঢুকে যায়। কয়েক দফা অপারেশনের পরও ১টি ছররা গুলি (স্প্রিন্টার) চোখ থেকে বের করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাম চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পান না।
বাসসের সাথে আলাপকালে আহত সামি জানান, টঙ্গির পূর্ব আরিচপুরে মা-বাবার সাথে বসবাস করেন সামি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে বন্ধুদের সাথে তিনিও যোগ দেন। গত ১৮ জুলাই রাজউক স্কুলের সামনে আন্দোলন করার সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। এ সময় তার বাম চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্প্রিন্টার বিঁধে যায়। পরিচিতরা তাকে উদ্ধার করে আগারগাঁও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে কারফিউ শিথিল হলে হাসপাতালে গিয়ে শরীরের স্প্রিন্টার বের করা হয়। কিন্তু গুলির কিছু অংশ এখনো চোখে রয়ে গেছে। এটি বের করতে না পারলে সারাজীবনের জন্য তার এক চোখ অন্ধ হয়ে যাবে।
চিকিৎসকরা তাকে দেশের বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এজন্য ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে তার চিকিৎসায় বহু টাকা খরচ হয়েছে। তার চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা।
সামি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবো। কিন্তু আমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এক চোখে দেখতে কষ্ট হচ্ছে। তবে দেশের জন্য কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরেছি। এজন্য গর্ববোধ করছি।’
সামি’র বাবা আক্তার হোসেন ভূইঁয়া বলেন, সামির চোখে দুই বার অপাররেশন করা হয়েছে। প্রথমে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এবং পরে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে। গুলির একটি অংশ এখনও চোখে রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে এটি বের করা সম্ভব না। দেশের বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য ২০-২৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। না নয় এই চোখে আর কোন দিন দেখতে পারবে না।
সামি’র ছোট চাচা সাফায়েত হোসেন ভূইঁয়া বাসসকে বলেন, আমার ভাতিজা সামি একজন মেধাবী ছাত্র। তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। কিন্তু আমরা এত টাকা জোগাড় করতে পারছি না। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে সামি’র উন্নত চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা কামনা করেন।
এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাসসকে বলেন, ‘আহত মোস্তাহিদ হোসেন সামি ও তার পরিবারের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’