বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শনিবার বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিএনপির অবিচল আস্থা অর্জনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, একনায়কতামুক্ত বাংলাদেশে হঠাৎ করে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিকল্প ছিল না। সঙ্গত কারণে, আমরা সেই সময় তাদের সমর্থন করেছি এবং এখনও তাদের সমর্থন করি। তাদের প্রতি আমাদের আস্থা যাতে অটুট থাকে তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ তাদের নিতে হবে।’
এক গণসমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে বিএনপির এই নেতা জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করতে হবে এবং কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তাদের পক্ষে সমস্ত পরিবর্তন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে, তবে তারা যে দায়িত্ব বহন করতে পারবেন না, তা তাদের পক্ষে কাঁধে নেওয়াও অযৌক্তিক হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, বিবৃতি ও প্রতিক্রিয়ায় ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, সরকার চালানো একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জটিল কাজ।
এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, এমনকি একটি ছোট বিচ্যুতিও একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে। অন্যদিকে অসতর্কতা প্রয়োজনীয় বিশ্বাসকে দুর্বল করতে পারে এবং জাতির শক্তির মূলে থাকা ঐক্যকে ভেঙে দিতে পারে।
তারেক বলেন, ‘এর যে কোনো একটি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। মনে রাখা দরকার, দেড় দশক ধরে গড়ে ওঠা একনায়কতন্ত্রের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য অশুভ চেতনা এত সহজে এর বিষাক্ত নিঃশ্বাস থেকে আমাদের মুক্তি দেবে না।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শহীদ রাকিব ও সাবিরের বিচারের দাবিতে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উদ্যোগে পায়রা চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, তারা প্রায়ই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অসহায়ত্ব ও বিশৃঙ্খলা দেখতে পাচ্ছেন; এতে ‘স্বৈরাচারী হাসিনা’র রেখে যাওয়া পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্র প্রকাশ পাচ্ছে।
তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে স্বৈরাচারীর সহযোগীদের মাধ্যমে সৃষ্ট সীমাবদ্ধতার ফাঁদে আটকে যাবে সরকার। একের পর এক ছোট ছোট সংকটগুলো বড় বিপর্যয়ে পরিণত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘তখন কার্যকর সমাধানের পথ অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে যাবে।’
তারেক বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক আস্থা ও সম্পর্ক, রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা, ব্যবসা সহজীকরণ, জননিরাপত্তা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এবং তৃণমূল পর্যায়ে নাগরিকদের দৈনন্দিন সেবা নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান জাতির জন্য আরেকটি স্বাধীনতা ও বিজয়ের বার্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা যদি তড়িঘড়ি করে এটাকে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করি, তাহলে আমরা আবারও ইতিহাস বিকৃতির ফাঁদে আটকে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ব।
স্বৈরাচারবিরোধী মহাযুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র, গৃহবধূ ও শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষের অবদানের প্রতি সম্মান জানানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি গত সতেরো বছরে হত্যা, গুম, বিচারিক হয়রানি এবং অন্যান্য নিপীড়নের শিকার হওয়া লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক কর্মীর আত্মত্যাগের উপরও জোর দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই, ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না।’