ঢাকা ০৬:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান ড. ইউনূসের

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৭:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের সতর্ক হতে হবে, এই সঙ্কটের সমাধান না হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র অঞ্চল সমস্যায় পড়বে।’
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশেনের ফাঁকে ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অব্যশই এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আইসিসি প্রসিকিউটর করিম এ এ খান, আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে নতুন করে ভাবার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমরা চাই জাতিসংঘ মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সকল পক্ষের উপস্থিতিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করুক।’
সম্মেলনে সঙ্কটের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা পূর্বক নতুন এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সমাধানের উপায় কী হতে পারে, তেমন প্রস্তাব আসতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন ।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দ্বিতীয়ত জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’ কার্যক্রমে নতুন করে প্রাণশক্তি যোগ করার প্রয়োজন। যেহেতু এখন রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় করার মত তহবিলের অভাব রয়েছে, তাই রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আন্তরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দ্বারা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠান হচ্ছে তবে ড. ইউনুসের উপস্থিতি ও তার দৃষ্টিভঙ্গি এবারের আলোচনাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বৈষম্য, রাষ্ট্রহীনতা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বন্ধ করতে আমাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বৈঠকের পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এবারের বৈঠকটি অত্যন্ত সফল ছিল। সবাই বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা এবং তাদের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’
আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কট সমাধানে আমাদের আরও কাজ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।’
আইওএম মহাপরিচালক জানান, তারা এই লক্ষ্য অর্জনে সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এই আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশ ও তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রায় ১৯ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের নতুন সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এই মার্কিন সহায়তা জীবন রক্ষা বিশেষ করে সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা, আশ্রয় এবং খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করবে।
এদিকে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশে অবস্থানরত কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে ‘আমাদের হতাশ করবেন না’ মর্মে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ওই ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া যাবে না।’

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান ড. ইউনূসের

আপডেট সময় : ০৫:৫৭:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের সতর্ক হতে হবে, এই সঙ্কটের সমাধান না হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র অঞ্চল সমস্যায় পড়বে।’
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশেনের ফাঁকে ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অব্যশই এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আইসিসি প্রসিকিউটর করিম এ এ খান, আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে নতুন করে ভাবার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমরা চাই জাতিসংঘ মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সকল পক্ষের উপস্থিতিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করুক।’
সম্মেলনে সঙ্কটের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা পূর্বক নতুন এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সমাধানের উপায় কী হতে পারে, তেমন প্রস্তাব আসতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন ।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দ্বিতীয়ত জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’ কার্যক্রমে নতুন করে প্রাণশক্তি যোগ করার প্রয়োজন। যেহেতু এখন রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় করার মত তহবিলের অভাব রয়েছে, তাই রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আন্তরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দ্বারা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠান হচ্ছে তবে ড. ইউনুসের উপস্থিতি ও তার দৃষ্টিভঙ্গি এবারের আলোচনাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বৈষম্য, রাষ্ট্রহীনতা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বন্ধ করতে আমাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বৈঠকের পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এবারের বৈঠকটি অত্যন্ত সফল ছিল। সবাই বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা এবং তাদের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’
আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কট সমাধানে আমাদের আরও কাজ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।’
আইওএম মহাপরিচালক জানান, তারা এই লক্ষ্য অর্জনে সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এই আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশ ও তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রায় ১৯ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের নতুন সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এই মার্কিন সহায়তা জীবন রক্ষা বিশেষ করে সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা, আশ্রয় এবং খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করবে।
এদিকে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশে অবস্থানরত কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে ‘আমাদের হতাশ করবেন না’ মর্মে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ওই ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া যাবে না।’