ঢাকা ০৯:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীন-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০১:২২:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

 

 

চীন ও চট্টগ্রামের মধ্যে সদ্য প্রতিষ্ঠিত সরাসরি শিপিং রুটের প্রথম জাহাজটি সফলভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এটি বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইনস (পিআইএল) পরিচালিত এমভি কোটা আঙ্গুন জাহাজটি চীনের নিংবো-ঝুশান বন্দর থেকে দ্রুত নয় দিনের যাত্রার পর সোমবার সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩ নম্বর জেটিতে নোঙর করে।

৫৫২টি কনটেইনার বহনকারী এই জাহাজটি একাধিক শিপিং কোম্পানির কনসোর্টিয়াম চীন-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস (সিসিই) পরিষেবার অধীনে উদ্বোধনী সমুদ্রযাত্রাকে চিহ্নিত করে। নতুন রুটটি চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে শিপিং সময় কমিয়ে দিয়েছে। আগে এ রুটে জাহাজ চলাচলের জন্য ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগতো।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজার কুদরত-ই-খুদা জাহাজের নোঙর করার বিষয়টি নিশ্চিত করে নতুন সরাসরি রুটের দক্ষতার প্রশংসা করেছেন।

তিনি বলেন, এমভি কোটা আংগুন রেকর্ড সময়েই যাত্রা সম্পন্ন করেছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা কলম্বোর মতো বন্দরে আগের মতো ট্রান্সশিপমেন্টের প্রয়োজন হয়নি, যা আগে সময় ও খরচ বাড়িয়ে দিত।

কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, পণ্যভেদে ১৯ সেপ্টেম্বর জাহাজটি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পিআইএলের অপারেশন অফিসার মাহতাব উদ্দিন বলেন, এই সরাসরি রুটটি ট্রানজিট সময় ব্যাপকভাবে কমাবে, যা বাংলাদেশের শিল্পখাত, বিশেষ করে যেসব খাত চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল, যেমন পোশাক খাতের মেশিনারি ও কাঁচামালের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

মাহতাব আরও জানান, প্রথম যাত্রাতেই রপ্তানির চাহিদা বাড়ছে। জাহাজটি ৫৫২টি আমদানি কনটেইনার নিয়ে এসেছে এবং আমরা আশা করছি, ৪০০-৫০০টি রপ্তানি কনটেইনার চীনে পাঠানো সম্ভব হবে।

চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে মোট ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ চীন থেকে ২২.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং ৬৭৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আসে। এ পর্যন্ত এসব পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের মাধ্যমে আসত, যা সময়ক্ষেপণ করত।

নতুন এই সরাসরি পরিষেবা পণ্য সরবরাহের সময় অনেকটাই কমিয়ে দেবে, যা পোশাক শিল্পের জন্য বেশ উপকারী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সিসিই পরিষেবার পাশাপাশি পিআইএল চট্টগ্রাম-চীন রুটে বিডি১ এবং বিডি২ নামে আরও দুটি পরিষেবা পরিচালনা করে, যদিও এসব রুটে সিঙ্গাপুরে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য থামতে হয়।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ সরাসরি শিপিং পরিষেবার শুরু হওয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা এই ধরনের পরিষেবার দাবি জানিয়ে আসছেন, যা কাঁচামাল, মেশিনারি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য দ্রুত আমদানির জন্য প্রয়োজনীয়।

তিনি আরও বলেন, শিপিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাড়তি প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য মালামাল পরিবহন খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই রুটে নিয়মিত শিপিং অপারেশন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে দীর্ঘমেয়াদে সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।

তবে মোহাম্মদ আরিফ সতর্ক করে বলেন, চীন-চট্টগ্রাম সরাসরি রুট অনেক সুবিধা দেবে। তবে, এই পরিষেবা নিয়মিতভাবে পরিচালিত হওয়া দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বাড়তে থাকায়, এই সরাসরি রুটটি উভয় দেশের আমদানি ও রপ্তানি ক্ষেত্রে দ্রুত ও সাশ্রয়ী শিপিং সমাধান প্রদান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চীন-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু

আপডেট সময় : ০১:২২:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

 

চীন ও চট্টগ্রামের মধ্যে সদ্য প্রতিষ্ঠিত সরাসরি শিপিং রুটের প্রথম জাহাজটি সফলভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এটি বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইনস (পিআইএল) পরিচালিত এমভি কোটা আঙ্গুন জাহাজটি চীনের নিংবো-ঝুশান বন্দর থেকে দ্রুত নয় দিনের যাত্রার পর সোমবার সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩ নম্বর জেটিতে নোঙর করে।

৫৫২টি কনটেইনার বহনকারী এই জাহাজটি একাধিক শিপিং কোম্পানির কনসোর্টিয়াম চীন-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস (সিসিই) পরিষেবার অধীনে উদ্বোধনী সমুদ্রযাত্রাকে চিহ্নিত করে। নতুন রুটটি চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে শিপিং সময় কমিয়ে দিয়েছে। আগে এ রুটে জাহাজ চলাচলের জন্য ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগতো।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজার কুদরত-ই-খুদা জাহাজের নোঙর করার বিষয়টি নিশ্চিত করে নতুন সরাসরি রুটের দক্ষতার প্রশংসা করেছেন।

তিনি বলেন, এমভি কোটা আংগুন রেকর্ড সময়েই যাত্রা সম্পন্ন করেছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা কলম্বোর মতো বন্দরে আগের মতো ট্রান্সশিপমেন্টের প্রয়োজন হয়নি, যা আগে সময় ও খরচ বাড়িয়ে দিত।

কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, পণ্যভেদে ১৯ সেপ্টেম্বর জাহাজটি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পিআইএলের অপারেশন অফিসার মাহতাব উদ্দিন বলেন, এই সরাসরি রুটটি ট্রানজিট সময় ব্যাপকভাবে কমাবে, যা বাংলাদেশের শিল্পখাত, বিশেষ করে যেসব খাত চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল, যেমন পোশাক খাতের মেশিনারি ও কাঁচামালের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

মাহতাব আরও জানান, প্রথম যাত্রাতেই রপ্তানির চাহিদা বাড়ছে। জাহাজটি ৫৫২টি আমদানি কনটেইনার নিয়ে এসেছে এবং আমরা আশা করছি, ৪০০-৫০০টি রপ্তানি কনটেইনার চীনে পাঠানো সম্ভব হবে।

চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে মোট ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ চীন থেকে ২২.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং ৬৭৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আসে। এ পর্যন্ত এসব পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের মাধ্যমে আসত, যা সময়ক্ষেপণ করত।

নতুন এই সরাসরি পরিষেবা পণ্য সরবরাহের সময় অনেকটাই কমিয়ে দেবে, যা পোশাক শিল্পের জন্য বেশ উপকারী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সিসিই পরিষেবার পাশাপাশি পিআইএল চট্টগ্রাম-চীন রুটে বিডি১ এবং বিডি২ নামে আরও দুটি পরিষেবা পরিচালনা করে, যদিও এসব রুটে সিঙ্গাপুরে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য থামতে হয়।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ সরাসরি শিপিং পরিষেবার শুরু হওয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা এই ধরনের পরিষেবার দাবি জানিয়ে আসছেন, যা কাঁচামাল, মেশিনারি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য দ্রুত আমদানির জন্য প্রয়োজনীয়।

তিনি আরও বলেন, শিপিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাড়তি প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য মালামাল পরিবহন খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই রুটে নিয়মিত শিপিং অপারেশন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে দীর্ঘমেয়াদে সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।

তবে মোহাম্মদ আরিফ সতর্ক করে বলেন, চীন-চট্টগ্রাম সরাসরি রুট অনেক সুবিধা দেবে। তবে, এই পরিষেবা নিয়মিতভাবে পরিচালিত হওয়া দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বাড়তে থাকায়, এই সরাসরি রুটটি উভয় দেশের আমদানি ও রপ্তানি ক্ষেত্রে দ্রুত ও সাশ্রয়ী শিপিং সমাধান প্রদান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।