ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে রাবিতে গণ-ইফতার অনুষ্ঠিত

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৫:২৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-ইফতার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় গণ-ইফতার। তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকীয়তায় পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকলে তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন মাদার বখ্স হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা তামিমসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাদের পাশেই উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু।

শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলার বিষয়ে আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন,‘আমরা কাউকে সরিয়ে দেয়নি। এটার আহ্বায়ক জোহা কোথায়? একসাথে ইফতার করার জন্য আমরা তাকে ডেকেছিলাম। সে কোথায়? এই আয়োজনের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কারো থেকে অনুমতি নেয়নি।’

এ সময় হঠাৎ ঘটনাস্থলে আসেন ইফতার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী জায়েদ এইচ জোহা। তখন জোহাকে নিয়ে মুক্তমঞ্চের পেছনে একান্তে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কথা শেষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতার হবে বলে ঘোষণা দেন।

এ সময় আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন,‘আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণ-ইফতার নামে কর্মসূচির বিষয় দেখেছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত না, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও অবগত না। আমরা এখানে এসে জটলা দেখতে পেয়েছি। এই আয়োজনের আহ্বায়ক জোহার সাথে কথা বলে আমরা রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইফতারে অংশগ্রহণ করেছি, যাতে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে। সেজন্য ক্যাম্পাসের পাহারাদার হিসেবে আমরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই ইফতার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি।’

তিনি আরো বলেন,‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা নোমানীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ, সেই উপলক্ষে তারা আজ ক্যাম্পাসে কোনো একটা কর্মসূচি পালন করবে। সেটা নামে-বেনামে হতে পারে। এই আয়োজনের আহ্বায়ক জোহা শিবিরের সাথে জড়িত আছে কিনা জানি না। তার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, সে জড়িত না। তার সাথে হয়তোবা ইফতারের পরে আরে কথা হবে। আপাতত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি হিসেবে আমরা সবাই একসাথে ইফতার করবো। ইফতার শেষে তার সাথে কথা বলবো।’

এরপর জোহাকে কাছে বসিয়ে ইফতার করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ইফতারে বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ইফতার শেষে ঘটনা আবার নাটকীয় মোড় নেয়। সবাইকে নামাজে যেতে বললেও, জোহার সাথে কথা বলতে চান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এটা বলে জোহাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলেও, জোহা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই কথা বলার অনুরোধ করেন তাদের। এরপরও তাকে বারবার অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় তাকে নামাজ পড়তে দেয়া হয়নি।

এ সময় শতশত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান এবং সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মনি ফেরদৌস। এই দুই শিক্ষক নামাজ শেষে জোহার সাথে কথা বলার জন্য বলেন ছাত্রলীগ নেতাদের। এ সময় ওই দুই শিক্ষক ও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হয়।

এ সময় জায়েদ এইচ জোহা বলেন,‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ফিল করছি’। তখন ওই দুই শিক্ষক ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, ‘তোমরা পরে, কাল বা পরশুও ওর সাথে কথা বলতে পারবা। ওকে যেতে দাও’। এরপর আবার জোহার সাথে একান্তে কথা বলে এসে সবার সামনে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জোহাকে জিজ্ঞাসা করেন,‘তুমি আমাদের সাথে যাবা কিনা?’ তখন জোহা বলেন, ‘যাবো ভাই’। এরপর উপস্থিত ওই শিক্ষক বলেন, ‘তাকে আমরা তোমাদের জিম্মায় দিলাম। তার যেন কিছু না হয়’।

এরপর জোহাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের পেছনে একান্তে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একটি রিকশা ডেকে তাকে তার মেসে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন তারা।

এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন,‘ওকে শিবির সন্দেহে এনেছিলাম। ওর (মোবাইল থেকে) মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখলাম, ছাত্রশিবির সম্পর্কে কিছু লেখাবার্তা বা ছাত্রলীগ বাঁধা দিচ্ছে ইফতারে অমুক-তমুক, মানে একেকজনের একেকরকম তথ্য দেয়া। ও শিবির করে, এমন কোনো তথ্য নাই ওখানে। কিন্তু গণ-ইফতার কর্মসূচি নামে একটা গ্রুপে আছে, সেখানে ছাত্রলীগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কনভারসেশন আছে। যেমন, ছাত্রলীগ ইফতার করতে দিচ্ছে না, মানে ওকে ইনফরমড করছে সবাই যে, এটা হচ্ছে, ওটা হচ্ছে। এগুলো দেখে, ওকে ছেড়ে দিয়েছি।’

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যা বললেন মাওলানা মামুনুল হক

নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে রাবিতে গণ-ইফতার অনুষ্ঠিত

আপডেট সময় : ০৫:২৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-ইফতার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় গণ-ইফতার। তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকীয়তায় পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকলে তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন মাদার বখ্স হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা তামিমসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাদের পাশেই উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু।

শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলার বিষয়ে আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন,‘আমরা কাউকে সরিয়ে দেয়নি। এটার আহ্বায়ক জোহা কোথায়? একসাথে ইফতার করার জন্য আমরা তাকে ডেকেছিলাম। সে কোথায়? এই আয়োজনের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কারো থেকে অনুমতি নেয়নি।’

এ সময় হঠাৎ ঘটনাস্থলে আসেন ইফতার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী জায়েদ এইচ জোহা। তখন জোহাকে নিয়ে মুক্তমঞ্চের পেছনে একান্তে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কথা শেষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতার হবে বলে ঘোষণা দেন।

এ সময় আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন,‘আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণ-ইফতার নামে কর্মসূচির বিষয় দেখেছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত না, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও অবগত না। আমরা এখানে এসে জটলা দেখতে পেয়েছি। এই আয়োজনের আহ্বায়ক জোহার সাথে কথা বলে আমরা রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইফতারে অংশগ্রহণ করেছি, যাতে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে। সেজন্য ক্যাম্পাসের পাহারাদার হিসেবে আমরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই ইফতার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি।’

তিনি আরো বলেন,‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা নোমানীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ, সেই উপলক্ষে তারা আজ ক্যাম্পাসে কোনো একটা কর্মসূচি পালন করবে। সেটা নামে-বেনামে হতে পারে। এই আয়োজনের আহ্বায়ক জোহা শিবিরের সাথে জড়িত আছে কিনা জানি না। তার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, সে জড়িত না। তার সাথে হয়তোবা ইফতারের পরে আরে কথা হবে। আপাতত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি হিসেবে আমরা সবাই একসাথে ইফতার করবো। ইফতার শেষে তার সাথে কথা বলবো।’

এরপর জোহাকে কাছে বসিয়ে ইফতার করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ইফতারে বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ইফতার শেষে ঘটনা আবার নাটকীয় মোড় নেয়। সবাইকে নামাজে যেতে বললেও, জোহার সাথে কথা বলতে চান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এটা বলে জোহাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলেও, জোহা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই কথা বলার অনুরোধ করেন তাদের। এরপরও তাকে বারবার অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় তাকে নামাজ পড়তে দেয়া হয়নি।

এ সময় শতশত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান এবং সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মনি ফেরদৌস। এই দুই শিক্ষক নামাজ শেষে জোহার সাথে কথা বলার জন্য বলেন ছাত্রলীগ নেতাদের। এ সময় ওই দুই শিক্ষক ও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হয়।

এ সময় জায়েদ এইচ জোহা বলেন,‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ফিল করছি’। তখন ওই দুই শিক্ষক ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, ‘তোমরা পরে, কাল বা পরশুও ওর সাথে কথা বলতে পারবা। ওকে যেতে দাও’। এরপর আবার জোহার সাথে একান্তে কথা বলে এসে সবার সামনে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জোহাকে জিজ্ঞাসা করেন,‘তুমি আমাদের সাথে যাবা কিনা?’ তখন জোহা বলেন, ‘যাবো ভাই’। এরপর উপস্থিত ওই শিক্ষক বলেন, ‘তাকে আমরা তোমাদের জিম্মায় দিলাম। তার যেন কিছু না হয়’।

এরপর জোহাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের পেছনে একান্তে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একটি রিকশা ডেকে তাকে তার মেসে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন তারা।

এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন,‘ওকে শিবির সন্দেহে এনেছিলাম। ওর (মোবাইল থেকে) মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখলাম, ছাত্রশিবির সম্পর্কে কিছু লেখাবার্তা বা ছাত্রলীগ বাঁধা দিচ্ছে ইফতারে অমুক-তমুক, মানে একেকজনের একেকরকম তথ্য দেয়া। ও শিবির করে, এমন কোনো তথ্য নাই ওখানে। কিন্তু গণ-ইফতার কর্মসূচি নামে একটা গ্রুপে আছে, সেখানে ছাত্রলীগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কনভারসেশন আছে। যেমন, ছাত্রলীগ ইফতার করতে দিচ্ছে না, মানে ওকে ইনফরমড করছে সবাই যে, এটা হচ্ছে, ওটা হচ্ছে। এগুলো দেখে, ওকে ছেড়ে দিয়েছি।’